আকাশ আহমেদ, (নওগাঁ) জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মান্দায় মটগাড়ী আদর্শ কৃষি সমবায় সমিতি লি.-এর নামে একটি সংস্থা সদস্যদের জমাকৃত টাকা ফেরত না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুদ বাণিজ্য ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুদ ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান সমিতির সভাপতি এবং মান্দা উপজেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি উপজেলার মটগাড়ী মণ্ডলপাড়া গ্রামের মৃত বদের আলী মণ্ডলের ছেলে।
জানা গেছে, শ্রমিক নেতা সদস্যদের আমানতের টাকা ফেরত না দিতে সময় ক্ষেপণ করছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দিনের পর দিন হয়রানি করছেন সাধারণ সদস্যদের। তার ক্ষমতার কাছে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছেন আমানতকারীরা। আমানতের টাকা ফেরত না পেয়ে ওই সমিতির অধিকাংশ সদস্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। হয়রানির শিকার হয়ে সমিতির সদস্যদের পক্ষে সাদেকুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সুদ ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে ২০০৬ সালে সমিতি শুরু করেন। বর্তমানে সমিতির সদস্যদের আমানতকৃত প্রায় ৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে। সময়মতো টাকাগুলো ফেরত দিতে গড়িমসি শুরু করেছেন তিনি। সদস্যদের টাকা ফেরত দিতে দিনের পর দিন হয়রানি করে চলেছেন তিনি ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সমিতির সভাপতি হামিদুর রহমান ২০০৬ সালে ‘মটগাড়ী কেয়ার ফসল’ নামে একটি সমবায় সমিতির কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ‘মটগাড়ী দুগ্ধ উৎপাদন’ সমবায় সমিতি লি. করেন। এরপর একই সদস্য দিয়ে ২০১৭ সালে পরিচালনা কমিটি ও সদস্যদের অনুমতি না নিয়ে নতুন করে নামকরণ করেন ‘মটগাড়ী আদর্শ কৃষি’ সমবায় সমিতি লি.। দফায় দফায় নিয়মবহির্ভূতভাবে একই সদস্যদের দিয়ে নাম পরিবর্তন ও সমবায় দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন করে নেন সমিতির সভাপতি পদে থাকা হামিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন। বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩২০ জন। ওই সব সদস্য দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমানতের টাকা ফেরত পেতে।
সমিতির সদস্য বিলকিস বানু, আমজাদ হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেনসহ অনেকে জানান, আমানতের টাকা ফেরত চাইলে দিনের পর দিন হয়রানি করছেন সমিতির সভাপতি হামিদুর। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি সময় ক্ষেপণ করে চলেছেন।
তারা আরো জানান, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন সমিতির নাম পরিবর্তন করে আসছেন।বর্তমানে আদরি বেগম নামে এক মহিলাকে ক্যাশিয়ার বানিয়ে সভাপতি নিজেই ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে সমিতি পরিচালনা করে আসছেন। সমিতির সদস্যদের আমানতকৃত টাকা বিভিন্ন খাতে খাটিয়ে আঙ্গুল ফোলে কলাগাছ হয়েছেন সভাপতি।
ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন আরো জানান, সমিতি প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে হামিদুর রহমান ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে তিনি মঞ্জিলতলা বাজারে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের মার্কেট ক্রয় করেছেন। এছাড়া কৃষিজমি ক্রয়সহ নামে-বেনামে প্রায় কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
মটগাড়ী আদর্শ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হামিদুর রহমান অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আখতার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করা হবে।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।