বিকাশ রায় বাবুল , নীলফামারী:
এক সময়ে আবহমান গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনযাত্রার আশ্রয়স্থল ছিলো কুঁড়েঘর।
কর্মময় দিন শেষে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে ঘুমানোর একমাত্র ভরসা ছিল কুঁড়েঘর। নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের বাড়ী ছিলো কুঁড়েরঘর। কদাচিৎ বিত্তশালীদের টিনের ছাউনি দিয়ে আধাপাকা ঘর দেখা যেত।
কিন্তু দিন বদলের পালায়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে আর্থিক সচ্ছলতায় আঘাত হেনেছে এক সময়ের আশ্রয়স্থল কুঁড়েরঘরে। এখন গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ টিনের ছাউনির আধাপাকা বাড়ী, পাকাবাড়ীসহ বহুতল বাড়ীও তৈরী করে জীবনযাপন করছে। ফলে এক সময়ের ঐতিহ্য কুঁড়েরঘর এখন বিলুপ্ত প্রায়। গ্রামের পর গ্রাম ঘুড়লেও চোখে পড়ে না এসব কুঁড়েরঘর।
প্রবীণ বয়োজৈষ্ঠদের সাথে আলাপচারিতায় তারা স্মৃতিবিজড়িত আবেগানুভুতি প্রকাশ করে বলেন, কয়েকটি কুঁড়েঘর তৈরী করে বাড়ী করতাম। ঘরগুলো ছিলো খড় বা ঘাস জাতীয় কাশ এবং বাঁশের তৈরী অবকাঠামোতে ছাউনি হিসেবে।
প্রচন্ড গরমে সেইসব ঘরে বিরাজ করতো শীতলতা। বর্ষার দিনেও নতুন ঘরে বৃষ্টি পড়ার শব্দও শোনা যেত না। দুই-তিন বছর অন্তর অন্তর ঘরের ছাউনি পরিবর্তন করতে হতো। আসবাবপত্র হিসেবে সেখানে বাঁশের তৈরী খাটে ঘুমিয়ে আমরা আগামীদিনের স্বপ্ন দেখতাম। আমাদের মতো গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই ছিল কুঁড়েরঘর।
তারা আরো জানান, আমাদের কখনো স্বপ্ন ছিলনা আকাশ ছোঁয়া। শুধুমাত্র আশা ছিল, সারাদিন কাজের শেষে একটু প্রশান্তি। আর সেই প্রশান্তির আশায় কর্ম ব্যস্ততায় দিনশেষে ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসি, সেই ছোট্ট কুঁড়েঘরে।
তারা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমাদের সেই কুঁড়েঘরে ছিলনা কোন দামী আসবাবপত্র। ছিল মাটির হাড়ি পাতিল রাখার পাটের তৈরী শিকা। যেখানে রাখা হতো বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আর কাপড় চোপড় রাখার জন্য ঘরের বেড়ার সাথে খুটিতে রশি দিয়ে বাধানো একটি লম্বা বাঁশের লাঠি।
আমরা সেসময়ে গ্রামের বসবাসরত মানুষজনের কল্পনাতীত ছিল রড, সিমেন্ট, বালু আর টিনের তৈরী পাকা ঘর। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে গেছে গ্রামের সেই চিরচেনা রুপ। আর মানুষের জীবনযাত্রায় মান বেড়ে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গেছে গ্রামীণ সেই কুঁড়েঘর।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা কুঁড়েঘর তৈরীর কারিগর(কুড়েঁঘর তৈরীকারীদের স্থানীয়ভাবে ছকরবন বা ঘরামী বলতো) ধনেরাম রায় বলেন, ঘর তৈরীর জন্য আমরা ৪,৫ জনের একটি দল ছিলাম। প্রতিদিন কারো না কারো ঘর তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করতাম। বাংলা সনের অগ্রায়ন মাস হতে ফাল্গুন মাসে সাধারনত ঘর তৈরী করতাম। কারন সেময় ঘড় ও কাশঁ পাওয়া যেত। আজ সেই দিনগুলো স্মৃতি হয়ে ভাসে।
কুড়েঘর সম্পর্কে কথা হয় সহকারী শিক্ষক ননী গোপাল রায়ের সাথে। তিনি বলেন, কুঁড়েঘর গ্রামীন ঐতিহ্যের একটি অংশ। ইহা আজ বিলুপ্ত প্রায়। । এটি এখন আমার কাছে শুধুই স্মৃতি।