কৃষি স্বনির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও। আশপাশের জেলাগুলোর তুলনায় এ ঠাকুরগাঁও জেলার ফসলের মান এবং উৎপাদন হার অনেক বেশি। কৃষিতে সেচ কাজে ব্যবহার হয়- এমন প্রাকৃতিক পানির উৎস বৃদ্ধি হলে এ জেলার কৃষি এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ।
এরই লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙ্গন ব্যারেজ, বুড়িবাঁধ ও ভুল্লির বাঁধ সেচ প্রকল্পগুলো পুনর্বাসন, নদীতীর সংরক্ষণ ও সম্মিলিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এতে বিদ্যমান সেচ প্রকল্পগুলো পুনর্বাসনের মাধ্যমে ৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমি ও সম্মিলিত পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ২ হাজার হেক্টর জমিসহ প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। ঠাকুরগাঁও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ৪৫ কিলোমিটার ব্যাপী এ নদী খনন কাজ। এরই মধ্যে মাটি কাটার কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন গ্রাউন্ড ওয়াটারের উপর চাপ কমবে, অন্যদিকে সেচের জন্য ব্যবহার্য অতিরিক্ত জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার ফসলের নিবিড়তা ২৪৫ শতাংশ উন্নীতকরণের মাধ্যমে বাৎসরিক প্রায় ১৫ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।
মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, ৪৫ কিমি. নদী পুনর্খননের মাধ্যমে নাব্যতাবৃদ্ধি এবং ৩ দশমিক ৩০ কি.মি. নদীতীর সংরক্ষণ কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করবে। তীরে বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বিরূপ প্রভাব থেকে প্রকল্প এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভুল্লি বাঁধ এলাকার বাসিন্দা মইনুল ইসলাম বলেন, শুকনো মৌসুমে এ এলাকার জমিগুলো পানিশূন্যতার কবলে পড়ে। নদী খননের ফলে শুকনো মৌসুমে পানি জমা থাকবে। এতে বিভিন্ন খাদ্যশস্য ফলানোর ক্ষেত্রে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও নদীতে মৎস্য আহরণ করে জনগণের চাহিদা পূরণ হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁও (পওর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রকল্প সমাপ্ত হলে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির প্রভাবে জমি সেচের আওতায় আসবে আরো ২ হাজার হেক্টর জমি। শুকনো মৌসুমে এ জমিগুলো সেচ সমস্যায় পড়বে না। নদী তীরে একটু পাড় রেখে বাকি মাটি সরিয়ে নেওয়া হবে। সে পাড়ে গাছ লাগানো হবে। এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার বালু বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ৩ জন ঠিকাদার ১৫ কি.মি. করে মোট ৪৫ কিলোমিটার নদী খননের কাজ করছেন। প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন গ্রাউন্ড ওয়াটারের উপর চাপ কমবে, ঠিক তেমনি সেচের জন্য যে অতিরিক্ত জ্বালানি প্রয়োজন হতো তা সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভুল্লিরবাঁধে ৪৫ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
Leave a Reply