মোঃ সাহানুর ইসলাম
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বেড়ামালঞ্চা গ্রামের জমিলা বেগম(ছদ্মনাম) যার নুন আনতে পানতে ফুরোয় অবস্থা। বয়স সেই কবেই ৮০ পেরিয়েছে। তবু বৃদ্ধ মা পেটের দায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে।
ঘর-বাড়ি বলতে আমরা যা বুঝি মানুষটার সেই সম্বল টুকুও নেই। একসময়ের আর সবার মতই টগবগে ছিলেন এই জমিলা বেগম। কাজ করে যা আয় হত তা দিয়ে দিব্যি চলে যেত সংসার। কিন্ত কালক্রমে পার্শ্ববর্তী বাড়ির কিছু নিকটাত্মীয়ের কুটবুদ্ধি আর হঠকারিতার ফলে জমি হারাতে হয় সবটুকু। হারাতে হয় মাথা গুজবার জন্য রাতে থাকবার স্থানটুকুও।।
দীর্ঘ একমাস রমজানের পর এসেছে খুশির ইদ। মানুষজন বাজারে যাচ্ছে, নতুন নতুন জামা-কাপড় কিনছে, ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে।। কিন্ত এই মানুষগুলার যেন সারাবছরই রমজান। তাদের মাথার ওপর কখনো ঈদের চাঁদ উঠে না!!
কি করুণ দৃশ্য।
স্বামী গত হয়েছেন সেই কবেই। একমাত্র ছেলে যিনিও কিনা কিঞ্চিৎ মানসিক প্রতিবন্ধী। থাকেন অন্যত্র আর নিজ মায়ের এবং মানসিক প্রতিবন্ধী বোনের যেন কোনো খোঁজখবর নেয়ার প্রয়োজনবোধই করেন না। সেই থেকে তিনি আর তার মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে লড়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকার এক আমরণ জীবনযুদ্ধে। জীবনে কখনও হার না মানা এই মানুষ গুলো হারতে বসেছে বয়সের ভারে। তবুও যেন তারা হাল ছাড়বার পাত্র নন।
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই কিছু মৌলিক চাহিদার কথা বলা থাকলেও, সেই চাহিদা পূরণে সরকারী বেসরকারী সাহায্য সহযোগিতাগুলো তাদের দরজায় কখনও কড়া নাড়ে না।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এর সবগুলোই যেন বালি চাপা পড়েছে বহু আগে।
সেই অন্ন খুঁজে পেতেই যেন এখন প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে পেটের দায়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত মা জমিলাকে।
মাথা গুঁজবার যেটুকু জায়গা আছে তাতেও সামান্য বৃষ্টি আসলেই আর রেহাই নেই। কাঁথা মুড়িয়ে গুটিসুটি দিয়ে মা-মেয়ে না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেন সারারাত। আহারে!
ঈদের কারোর জন্য বেশ আনন্দের আর সেই একই ঈদের চাঁদ কারোর জন্য যেন আগুনে পোড়ানো ঝলসানো রুটি।
আহারে কি জীবন!
তবে গাইবান্ধা জেলার উক্ত এলাকারই কিছু উদ্যমী তরুণ যুবাদের এই দৃশ্য চোখে পড়লে, তারা সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতার জন্য উন্মুক্ত ফান্ড গঠন করে সবাইকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানালে সবাই তাতে সাড়াও দেন। বেশ খানিকটা নগদ অর্থ কালেকশনের দ্বারা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে সেই মাকে তারা উপহার দেন টিনসেডের একটি ছোট্ট বাড়ি। বাড়ি পেয়ে অসহায় মা এবং প্রতিবন্ধী মেয়ে উভয়েই ভীষণ খুশি। মন খুলে দোয়া করেছেন সেই যুবকদের জন্য।
যুবকরা বলছেন ঈদ তো আসলে ধনী-গরীব সবারই। ঈদের আনন্দ সবাই মিলে ভাগাভাগি করার জন্যই তাদের এই আয়োজন। তাদের আশা অসহায় এমন সব মায়ের হাসি যেন অটুট থাকে আজীবন।