নিজস্ব প্রতিবেদক
ভোজ্যতেলের দামে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। এক বছর আগেও যে সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১১৮ টাকা লিটার, বর্তমানে তা প্রতি লিটার ৮০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৮ টাকায়। তবে দাম বাড়লেও বাজারে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ। বারবার দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
দাম সহনীয় রাখতে মার্চেই ভোজ্য তেলের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার। তারপরও লাগাম টানা যায়নি ভোজ্য তেলের দামে। এক বছরের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ৮০ টাকা।
টিসিবির তথ্য অনুয়ায়ী, চার বছরে যেসব ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে তার মধ্যে অন্যতম সয়াবিন ও পাম অয়েল। ২০১৯ সালে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০৪ টাকা। পরের বছর সেটি বেড়ে হয় ১১৫ টাকা আর ২০২১ সালে হয় ১৩০ টাকা। এবছরের শুরুতে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সরকার ভোজ্য তেলে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট তুলে নেয়ায় লিটার প্রতি দাম ধরা হয় ১৬০ টাকা। তবে সবশেষ বৃহস্পতিবার আবারো লিটারপ্রতি এক লাফে রেকর্ড ৩৮ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৮ টাকা।
তেলের দাম বাড়ানো হলেও বাজারে সরবরাহ কম। কারণ হিসেবে বারবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকদের অভিযোগ, তেল বিক্রি না করে মজুত করছেন ডিলার ও খুচরা দোকানিরা।
একদিকে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে বাজারে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ। সব মিলিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা ক্রেতাদের। তাই দাম ভোক্তাদের নাগালে রাখার দাবি জানান তারা।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরে ৪টি জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল। আজ আসবে তেল-ভর্তি আরো দুটি জাহাজ।
এছাড়া, চলতি বছরের প্রথম চার-মাসে দেশে প্রায় একশ' ৩৫ কোটি লিটার পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে তেলের সংকট থাকার কথা নয় বলে মনে করছে ক্যাব।
ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রফতানি বন্ধ ঘোষণায় টালমাটাল দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। তবে, তেল আমদানি স্বাভাবিকই আছে।
২৯ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে তেলবাহী চারটি জাহাজ। যেখানে রয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল। এর মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ লিটার অপরিশোধিত পাম তেল এসেছে খোদ ইন্দোনেশিয়া থেকে। আর ২ কোটি ৮০ লাখ লিটার অপরিশোধিত সয়াবিন আনা হয়েছে আর্জেন্টিনা থেকে।
স্থানীয় শিপিং এজেন্টরা বলছেন, খালাস কার্যক্রম চলমান থাকা জাহাজগুলোর বাইরে এমটি তৌরুজ ও এমটি সুমাত্রা নামে আরো দুটি জাহাজ ইন্দোনেশিয়া থেকে পামতেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে অপেক্ষায় রয়েছে।
আমদানি অব্যাহত থাকলেও তেলের দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে ক্যাব।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম চারমাসে দেশে প্রায় একশ' ৩৫ কোটি লিটার পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।