আকাশ আহমেদ, (নওগাঁ) জেলা প্রতিনিধি
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা উত্তরের সীমান্তবর্তি জেলা নওগাঁ। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা। পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটকদের পক্ষে একদিনে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান দর্শন করা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প খরচে একদিনে একাধিক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ভ্রমণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালু করা হয়েছে ট্যুরিষ্ট বাস “ভ্রমণ বিলাস”। চলাচলের পর থেকেই ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলেছে এই ট্যুরিস্ট বাস “ভ্রমণ বিলাস”।
ঈদের প্রথম সাতদিনের প্রতিদিনই সকাল ৯টার সময় শহরের মুক্তির মোড়ের পদ্মা বাস কাউন্টার থেকে ভ্রমণ পিপাসু ৩৮জন পর্যটকদের নিয়ে পিপ পিপ শব্দে ছেড়ে যাচ্ছে ভ্রমণ বিলাস। প্রতিদিনই শতাধিক মানুষ ভ্রমণের এই প্যাকেজ নিতে ভিড় করছেন কাউন্টারে। নওগাঁবাসীর আশা এই ভ্রমণ বিলাস ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে নওগাঁকে পুরো দেশ এবং বিশ্বের কাছে নতুন করে তুলে ধরবে পর্যটকদের মাধ্যমে। আর আর্থ-সামাজিক ভাবে উন্নয়ন ঘটবে পর্যটন এলাকাগুলোর।
ঈদের দ্বিতীয় দিন শহরের মুক্তির মোড়ে পদ্মা বাস কাউন্টার থেকে ট্যুরিস্ট বাস “ ভ্রমণ বিলাস” এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ট্যুরিস্ট বাস “ ভ্রমণ বিলাস” এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান। এছাড়াও এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএমএ মামুন খাঁন চিশতি, নওগাঁ সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা কালিমী বাবু, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কায়েস উদ্দিন প্রমুখ। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর থেকেই নওগাঁ ও তার আশেপাশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই ট্যুরিস্ট বাস “ভ্রমণ বিলাস”।
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, পর্যটকদের সকল প্রকারের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেই এমন ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি আশাবাদি নওগাঁসহ সারা দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের চাহিদা পূরণ করবে এই ভ্রমণ বিলাস। এতে করে নওগাঁর পর্যটন খাত দিনে দিনে আরো চাঙ্গা হয়ে উঠবে। পর্যটকদের মতামত ও পরার্মশকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে এই ভ্রমণ আরো আকর্ষনীয়, আরামদায়ক ও আনন্দদায়ক করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নওগাঁর পর্যটন এলাকাগুলোর আর্থ সামাজিক অবস্থার অভূতপূর্ব পরিবর্তন হবে বলেও আমি আশাবাদি।
তিনি আরো বলেন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের বাস্তবায়নে প্রাথমিক ভাবে ৪৫০টাকার একটি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। এই প্যাকেজের মাধ্যমে একজন পর্যটক খুব সহজেই প্রথমে ভারত সীমান্তঘেষা উপজেলা ধামইরহাট উপজেলার জাতীয় উদ্যান শালবন বিহারের আলতাদীঘি, ঐতিহাসিক জগদ্দল বিহার, বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও হলুদ বিহার ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া প্যাকেজের মাধ্যমে ভ্রমণরত পর্যটকরা সকাল ও বিকেলের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার পাবেন। বাড়তি আকর্ষন হিসেবে প্রতিবার ভ্রমণের দিন বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এরপর হলুদ বিহার দর্শন শেষে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে এসে শেষ হবে ওই দিনের ভ্রমণ।
প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের রুট হিসেবে নির্ধারন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে জেলার সকল ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের জন্যও প্যাকেজ তৈরি করা হবে। পর্যটকরা এই ভ্রমণের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাজার হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে নতুন করে জানার সুযোগ পাবেন। ঈদের প্রথম সাতদিন এই ট্যুরিস্ট বাস প্রতিদিনই চলছে। এরপর সপ্তাহে দুই দিন এবং পরবর্তিতে পর্যটকদের আগমনের উপর নির্ভর করবে।
Leave a Reply