মো. মিলন মোল্লা, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় ইটভাটার টানানো তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সুমন খান (৩৬) নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১১ মে) রাতে দুইজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন সুমনের ছোট ভাই মো. লিটন খাঁন (৩৩)। সুমন ও লিটন উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়া (নতুনপাড়া) গ্রামের মো. নয়ন খাঁনের ছেলে।
হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামীরা হলেন, আমিন ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মো. নুরুল আমিন ওরফে আমিন (৫০) এবং দেওয়ান সাইদুর রহমান (৫৫)। নুরুল আমিন উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের আদাশরী গ্রামের মৃত মাজেদ মোল্লার ছেলে। অপর আসামী দেওয়ান সাইদুর রহমান বয়ড়া ইউনিয়নের দাসকান্দি বয়ড়া গ্রামের মৃত নুরুল হক দেওয়ানের ছেলে। তিনি হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, আসামীদ্বয় পরস্পর আমিন ব্রিকস এর ব্যবসায়িক অংশীদার। তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমিন ব্রিকস এর ভিতরে নিম্নমানের পুরাতন বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যা ঝড়ো আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। গতকাল বুধবার (১১ মে) সকাল ১০টার দিকে সুমন খান ওই ইট ভাটা সংলগ্ন মাঠে গরু চড়াতে যায়। গরু খাস খাওয়ার একপর্যায়ে ইট ভাটার ভেতরে প্রবেশ করে। গরুটি ফিরিয়ে আনতে গেলে সুমন খান অসতর্কতাবশত ভাটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল (২৬) সুমনকে উদ্ধার করতে গেলে সেও বিদ্যুতের তারে শক খেয়ে ছিটকে পড়ে অাহত হয়।
ঘটনাস্থল হতে আনুমানিক ৫০ গজ দূরে অবস্থানরত শিশু রনি (১২) তাদের দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে অাশেপাশের লোকজন আসে। তারা সুমনকে মৃত অবস্থায় এবং রাসেলকে আহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে। আহত রাসেলকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা হরিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় এবং সুমনের লাশ ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে হরিরামপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে নিহতের সুরতহাল প্রস্তুত করিয়া ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। মূল মিটার হতে ইটের ভাটার বিভিন্ন জায়গায় নিম্নমানের পুরাতন বিদ্যুতের তার, যা নড়বড়ে পুরনো বাঁশের খুঁটি দিয়ে লাইন টানানো হয়েছে। আসামীদ্বয়ের অবহেলাজনিত কারণে ফেলে রাখা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সুমন খানের মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে আমিন ব্রিকস এর স্বত্বাধিকারী মো. নুরুল আমিন ওরফে আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ইট ভাটা হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের নিকট ভাড়া দিয়েছি।”
তবে, হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, “আমি মামলার কথা শুনেছি। ওই ইটভাটার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। ভাটার মালিক নুরুল আমিন।”
হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, “গতকাল রাতে নিহতের ছোট ভাই লিটন বাদী হয়ে নুরুল আমিন ও দেওয়ান সাইদুর রহমানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”
Leave a Reply