শেরপুর সংবাদ দাতা ।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতৃত্ব বহাল ও হটাওয়ের দৌড় শুরু হয়েছে। আর এর অংশ হিসেবে সদ্যবিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমের বিরুদ্ধে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মিথ্যের বেসাতি দিয়ে নগ্নভাবে চলছে তার বিষোদগার। এ নিয়ে স্থানীয় দলীয় অঙ্গনে নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রচÐ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গত ৯ মে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা না করে পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে ঘোষণার কথা জানানো হয়। দলীয় ও স্থানীয় সূত্রমতে, ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে টানা তৃতীয় দফায় সভাপতি পদে বহাল থাকতে এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম ও দলের মূলধারায় থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেন।
সেইসাথে নাইম অনুসারীরা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়কে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে নানা তৎপরতা চালায়। একইসাথে নাইম থেকে দূরত্ব কমিয়ে স্বীয় পদে বহাল থাকতে তৎপর হয়ে উঠেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক, সাংবাদিক এসএম আমিরুজ্জামান লেবু। অন্যদিকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সভাপতি ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করে তারাও ব্যানার-ফেস্টুন প্রচারণার পাশাপাশি রাজনীতির অন্দর-বাহিরে নানাভাবে তৎপরতা শুরু করেন। ইত্যকার অবস্থায় প্রথম অধিবেশনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষিত হলেও কোন সমঝোতা না হওয়ায় সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা ছাড়াই শেষ করতে হয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে নাইমের নামটাই সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে।
এদিকে এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমকে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদ থেকে হটাতে দলের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অংশ তার বিরুদ্ধে মিথ্যের বেসাতি দিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। নামে-বেনামে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পাঠাচ্ছে। থেমে নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রপাগান্ডা ছড়ানো।
তারই আওতায় ১২ মে ‘জাসদ-ফ্রিডম পার্টি দিয়ে শুরু, শেষে আওয়ামী লীগ নেতা : কে এই নাইম’ শিরোনামে একটি ভুঁইফোড় অনলাইনে পরিবেশিত খবরে তার বিরুদ্ধে নগ্নভাবে বিষোদগার করা হয়েছে। ওই খবরে নাইমকে জাসদ ছাত্রলীগে থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতা আশীষ দত্ত ভোলা হত্যায় জড়িত এবং এর আগে ফ্রিডম পার্টির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে।
কেবল তাই নয়, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে পদ বাগানো, ত্যাগী নেতাদের দল থেকে বিতাড়িত ও মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল-জুলুম, হাইব্রীড ও সুবিধাবাদীদের দলে ভেড়ানোসহ স্বজনপ্রীতি এবং ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় দলীয় নেতারা বলছেন, দলকে আগলে রাখা নাইমকে হটাতে একটি অংশের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ওইসব মিথ্যের বেসাতিমূলক অভিযোগ তোলা হয়েছে।
নাইমের বিষয়ে ওইসব ষড়যন্ত্র ও অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সদ্যবিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর আলী বলেন, তিনি ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও ছাত্রলীগ নেতা ভোলা হত্যার সাথে কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না। স্থানীয় একটি মহলের যোগসাজসে তাকে আসামি করা হলেও পরবর্তীতে তদন্তে সত্যতা না পাওয়ায় তার নামসহ কয়েকজনের নামই বাদ যায়।
পরবর্তীতে ওই মামলার বিচারে একজনের যাবজ্জীবন কারাদÐও হয়। কাজেই এতদিন পর সেই প্রতিষ্ঠিত সত্যকে আড়াল করার সুযোগ নেই। এছাড়া তিনি কখনই ফ্রিডম পার্টির সাথে জড়িত ছিলেন না, বিষয়টি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক। দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জেল-জুলুমের বিষয়ে তিনি বলেন, দলের একটি উচ্ছৃঙ্খল অংশ দলীয় কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা, বিস্ফোরণ ও জাতির পিতার ছবি ভাঙচুর করেই ক্ষান্ত থাকেনি, তারা ওই হামলায় নাইমের মাথা ফাটিয়ে তাকে হত্যা চেষ্টা চালিয়েছিল।
সদ্যবিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী বিদ্যুৎ বলেন, আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম দলের একজন পরীক্ষিত নেতা। তিনি দীর্ঘদিন যাবত উপজেলা আওয়ামী লীগকে আগলে রেখেছেন। ভেদাভেদ ভুলে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই দলের পক্ষে তিনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। অথচ দলের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অংশ উপজেলা নির্বাচনে টানা ২ বার বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে দলের পরাজয় নিশ্চিত করলেও তারাই আজ নাইমকে নেতৃত্ব থেকে হটাতে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। একই কথা জানিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান শাওন বলেন, অপরাজনীতির সাথে জড়িত মহলটির ওইসব অপপ্রচারণায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রচÐ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এটি বন্ধ নাহলে তারা সময়োচিত জবাব দিতে বাধ্য হবেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওইসব অভিযোগের সবগুলোই কেবল মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলকই নয়, রীতিমতো দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœকর ও তার নিজের মানহানিকর। যা প্রচলিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আওয়ামী লীগের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এবং বিএনপি-জামায়াত চক্রের যোগসাজসে থাকা একটি অংশ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকেসহ দলকে বিতর্কিত করতেই ওইসব অভিযোগ ও নানা অপপ্রচার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।