শুভ আহমেদ সাকিব
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধিঃ
সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা রেলস্টেশন দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে পেঁয়াজ আমদানী হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানী না করার ব্যাপারে গত ৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এরপরও কিভাবে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে ৪০ ওয়াগন পেঁয়াজ আমদানী করা হচ্ছে তা নিয়ে আমদানীকারকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সিএন্ডএফ এজেন্ট ফিজা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী রায়হান জানান, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোয়ালপাড়ার ইমরানমার্কেটের মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মাসুদ আলম ভারত থেকে ৪০ ওয়াগন পেঁয়াজ আমদানীর জন্য এলসি খোলে। সেই পেঁয়াজ দু-একদিনের মধ্যেই ভারতের গেদে রেলস্টেশন হয়ে দর্শনা রেলস্টেশন দিয়ে দেশে ঢুকবে। যার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
দর্শনা রেলস্টেশনের সুপারিনডেনটেন্ট মীর লিয়াকত আলী বলেন, ‘ভারত থেকে কি পণ্য আমদানী করা হয় তা আগে থেকে জানা সম্ভব হয় না। পণ্যবাহী ট্রেন দর্শনা রেলস্টেশনে পৌছানোর পর ওই ট্রেনের দায়িত্বরত ব্যক্তি আমাদের কাছে আমদানী করা পণ্যের কাগজপত্র হস্তান্তর করে। সেগুলো পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ শেষে আমরা ওই কাগজপত্র দাপ্তরিকভাবে দর্শনা কাস্টমস্ েপাঠায়। দর্শনা কাস্টমস্ থেকে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসে ট্রেনের ওয়াগন খুলে সেগুলো নিরীক্ষা শেষে তবেই ছাড়পত্র দেয়। তারপর আমদানী পণ্যর ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়। এর ফলে আমদানী নিষিদ্ধ কোনো পণ্যই দেশে প্রবেশ সম্ভব নয়।’
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কাস্টমস্ সুপার শুভাশীষ কুণ্ডু জানান, ‘পেঁয়াজ আমদানী বিধিনিষেধের কোন দাপ্তরিক চিঠি আমাদের হাতে আসেনি। তবে পেঁয়াজ আমদানীর ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিধিনিষেধের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে এরই মধ্যে ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজের চালান দেশের অভ্যন্তরে ঢোকেনি।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন আমদানীকারক জানান, পেঁয়াজ আমদানীর ক্ষেত্রে সরকারিভাবে আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) দেয়া বন্ধ রয়েছে। আইপি না পেয়েও কিভাবে মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী করছে তা আশ্চর্যের বিষয়। আমদানীকারকরা, সরকারি বিধিনিষেধ না মানায় পেঁয়াজ আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। তারা আরো বলেন, নির্দেশ উপেক্ষা করে এ ধরনের কাজ গর্হিত অপরাধের সামিল। তারা দাবি করে, ঢাকা ফার্মগেট খামার বাড়ীর উদ্ভিদ সংগনিরোধের পরিচালক রণজিৎ পালসহ সকলকে বিষয়টি অবহিত করানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আমদানী করা হচ্ছে, তা সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। পেঁয়াজের চালান পৌছানোর পর ভারতের উদ্ভিদ সংগনিরোধ প্রতিবেদন ও ইমপোর্ট পারমিট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে রাষ্টীয় বিধিনিষেধের বিষয়টি মানা হবে।
আমদানীকারক মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রথমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানীর বিষয়টি আমলে না নিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি জানলাম না, আর আপনি জেনে গেলেন যে, ভারতের গেদে রেলস্টেশনে পেঁয়াজের চালান দেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে’। কথাগুলো বলে তিনি মোবাইল ফোন কল কেটে দেন। কিছুক্ষণ বাদে ফিরতি ফোন কলে তিনি আরো জানান, ‘আমি একজন আন্তর্জাতিক আমদানীকারক। সে কারণে সমস্ত নিয়মনীতি মেনেই আমাকে পণ্য আমদানী করতে হয়। ভারত থেকে পেঁয়াজ যখন দেশে ঢুকবে তখন আপনাকে আমি দর্শনায় নিয়ে যাবো এবং দেখিয়ে দেবো সঠিকভাবেই আমি পেঁয়াজ আমদানী করছি। এটা নিয়ে এত মাতামাতির কারণ নেই’।