সম্পাদকীয়
আবু সাঈদ
সহকারী শিক্ষক (আইসিটি)
সাঁথিয়া, পাবনা।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়েই গড়ে উঠেছে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রাণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। কিন্তু দেশের বেসরকারি শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। অথচ তাদের মানসম্মত পাঠদানের পরিবেশ এবং সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন দেশের শিক্ষাবিদরা।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বড় অংশও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের ৯০ ভাগ শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেবাদান করে আসছেন। বেশির ভাগ শিক্ষক বেসরকারি হওয়া সসত্ত্বেও তারা নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। এটা আর্থিক বছরের বাজেট শেষে কিংবা মাসে মাসে নয়, দ্রব্যমূল্যর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন বললেও ভুল হবে। কারণ একটি পন্য সকাল বেলা যে দামে ক্রয় করা সম্ভব সেটা বিকেলে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
একজন রাজমিস্ত্রি কিংবা অন্যান্য শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা নূন্যতম ৫০০ টাকা। অথচ এন্ট্রি লেভেলে একজন এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষকের সর্বসাকুল্যে বেতন মাত্র ১২,৭৫০ টাকা, যা দৈনিক হিসেবে মাত্র ৪২৫ টাকা।
একজন শ্রমিক যেন তেন কাপড় পরিধান করে কর্মে যেতে পারেন। কিন্তু একজন শিক্ষককে অবশ্যই মার্জিত পোশাক পরেই পাঠদান করতে হয়। পোশাকের জন্য শ্রমিককে বাড়তি খরচা গুনতে না হলেও শিক্ষকের তা প্রয়োজন হয়।
প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী পাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ শিক্ষকই প্রতিষ্ঠান থেকে একটি টাকাও সম্মানী পান না। কিছু শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনিতে সামান্য বাড়তি আয় করতে পারলেও বেশিরভাগ শিক্ষক তা পারেন না। কিন্তু খরচ তো হবেই।
আমার খুব আফসোস হয় মানুষ গড়ার কারিগরদের দুরবস্থার কথা ভেবে। যাদের থাকার কথা সর্বাপেক্ষা সমাদৃত, থাকার কথা সর্বোচ্চ সম্মানীয় আসনে, অথচ তারাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, নিপীড়িত। যে শিক্ষক দূরে গিয়ে চাকরি করছেন, তাকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়।
একটা ঝুপরি ঘর ভাড়া নিলেও তিনহাজার টাকা গুনতে হয়। ২/৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের এক মাসের সর্বনিম্ন খরচ তার প্রাপ্ত বেতনের চেয়ে বেশি। আবার আমার মত বেশি দূরে যারা চাকরি করছেন, তাদের একার একবার বাড়ি যাতায়াত খরচ গুনতে হয় সর্বনিম্ন ৪,০০০ টাকা। যারা নিজ বাড়িতে থেকে চাকরি করছেন তারা তবু দুবেলা ডালভাত খেয়ে বাঁচতে পারছেন।
গ্রাম এলাকার নিজ বাড়িতে থেকে চাকরি করা একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের একবেলার বাজার না থাকলেও কচুশাক ভর্তা খেয়ে পার করতে পারেন। কিন্তু দূরে গিয়ে চাকরিরত একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সে সুযোগও নেই।