শাকিল আহমেদ, নড়াইলঃ
আজ ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই ১৯৯৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
নড়াইল পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় নিরাপদ মাতৃত্ব,মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, কৈশরকালীন পরামর্শ ও পরিবার পরিকল্পনাসেবায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনাসেবায় খুলনা বিভাগে তৃতীয় অবস্থানে নড়াইল জেলা।
ঝুঁকিপূণ গর্ভাবস্থা ও পরিবারের অবহেলা,সচেতনার অভাব মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।প্রাক-গর্ভকালীন,গর্ভকালীন প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণই হল নিরাপদ মাতৃত্ব।আর নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে নড়াইল পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় অগ্রনী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
নড়াইল মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে বছরের ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।এখান থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে নিরাপদ মাতৃত্ব অর্জন করছে মায়েরা।পাশাপাশি প্রতিদিন মা-শিশু,কিশোর-কিশোরীদেরকে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে গর্ভবতীদের নিয়মিত চেকাপ,কৈশরকালীন স্বাস্থ্য পরামর্শসহ সাধারন রোগীদের চিকিৎস সেবা দেওয়া হয়। সেবা গ্রহিতা লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের আমেনা খাতুনসহ অনেকে বলেন,আমরা গর্ভকালিন সচেতনাসহ যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িতে বসেই পরামর্শ পেয়ে থাকি। ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হতে ,স্ত্রীরোগসহ নানা রোগের চিকিৎসা নিতে পারি।
এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি, নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং সবার জন্য পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও পরামর্শ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে পরিবার কল্যাণ সহকারিরা কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।
সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারি ডালিয়া পারভীন বলেন,আমরা প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গিয়ে মাতৃস্বাস্থ্য সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেই। বিশেষ করে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে প্রাক-গর্ভধারণ,গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী মায়ের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা ও পরামর্শ প্রদান করি।
নড়াইল মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মান্নান মোল্যা বলেন,নড়াইলে মাতৃমৃত্যু হার প্রায় শূণ্যের কোটায়।আমার ২২বছরের জীবনে কোন দূর্ঘর্টনা ঘটেনি বলে তিনি যোগ করেন।গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময়, এমনকি প্রসবের পর ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন হাত-পা ফুলে যাওয়া,অত্যধিক বমি হওয়া, প্রসবের আগে বা পরে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ, তীব্র মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা,তীব্র জ্বর, ১২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে প্রসব ব্যথা, খিঁচুনি।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জটিলতা আগে থেকে অনুমান করা যায় না।তবে জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হলে এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এসব অনাকাক্ষিত পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো যায়।
নড়াইল পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় এর উপ-পরিচালক এ কে এম সেলিম ভ’ইয়া বলেন, জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশল বাস্তবায়নে নড়াইল পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।শুধু শহরাঞ্চলে নয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিরাপদ মাতৃত্বস্বাস্থ্যসেবা, কৈশরকালীন পরমর্শ ও পরিবার পরিকল্পনাসেবা প্রদান করছে।নিরাপদ নরমাল ডেলিভারির নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রশিক্ষিত ধাত্রী রয়েছে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ মাতৃত্বকালিন সেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মান করা হচ্ছে।ইতিমধ্যে কালিয়া উপজেলার খড়ড়িয়া গ্রামের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির সেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে।লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে এবং লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শ্রীঘ্রই শুরু হবে।