বিকাশ রায় বাবুল, নীলফামারী প্রতিনিধি :
একটা সময় ছিল যখন গ্রাম বাংলার যে কোন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এমনকি রাতে দলবেঁধে মাছধরা সহ সকল ধরনের কাজে আলোক স্বল্পতা কে দূর করে অধিক আলোর জন্য ব্যবহৃত হতো এই হ্যাচাক লাইট। এটি ছাড়া গ্রামীন জনগোষ্ঠীর কোন অনুষ্ঠানই যেন পূর্ণতা পেত না।
কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথেই হারিয়ে গেছে বহুল ব্যবহৃত এই হ্যাচাক লাইট যা গ্রামবাংলার মানুষের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি।
এটি প্রতিটি বাড়ীতেই ছিল না। ছিল শুধুমাত্র গ্রামের বিত্বশালী শ্রেণির মানুষের বাড়ীতে। আবার কারো কারো কাছে এটি নিদিষ্ট দিনের জন্য ভাড়ায় পাওয়া যেত । অনেকেই দু -চারটি কিনে ভাড়া দিয়েও চালাত সংসার।
যেকোন অনুষ্ঠানের আগের দিন এটিকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হতো। আর অনুষ্ঠানের দিন বিকেলের দিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ভালো মন্দ যাচাই করে ব্যবহার উপযোগী করে রাখা হতো। যাতে নিদিষ্ট সময় কোন রকম আলোক স্বল্পতা ভূগতে না হয়। সেজন্য যিনি এই কাজে বিশেষ দক্ষ ছিলেন তাকে অনেক সমাদর করে ডেকে আনা হত। আর এটির যখন ভালো মন্দ যাচাই করা হতো তখন বাড়ির কচি কাচারা অনেক আগ্রহ ভরে দেখত। সেসময় তাদের মনে বিরাজ করত উৎসবের আমেজ।
এটি দেখতে ছিল অনেকটা হারিকেনের মতোই তবে তার চেয়ে অনেকটা উঁচু। আর চারদিক ছিল কাঁচ দিয়ে ঘেরা। কাঁচের উপরে ছিল ছাউনি যার কারনে আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত আর কাঁচের ভিতরে ছিল সাদা সুতোর মতই বিশেষ বস্তু দিয়ে তৈরি সাদা ধবধবে অংশ যাকে বলা হতো মেন্ডেল। সেই মেন্ডেল থেকেই কাঁচের ভিতর দিয়ে বের হতো আলো। আর নিচে ছিল তেল রাখার জন্য কুঠুরী, সাথে ছিল পাম্প দেওয়ার পাম্পার ও তেলের চাবি এবং পাশ দিয়ে লম্বা একটি নলের মতো যা দিয়ে তেল ছড়িয়ে পড়ত । যেগুলোর সমন্বয়ে জ্বলত এই হ্যাচাক লাইট।
এটিতে প্রায় ৩ লিটারের মতো তেল প্রবেশ করালেই জ্বালানো যেত সারারাত। শুধুমাত্র নিদিষ্ট সময় পর অর্থাৎ ১-২ ঘণ্টা পর পর পাম্পার দিয়ে দিতে হতো পাম্প।
এটি পিতল ও স্টিলের হতো। দাম ছিল প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিন্তু সেই সময় এ দামই ছিল অনেক।
বহুকাল পূর্ব থেকেই এটির ব্যবহার ছিল লক্ষ্যনীয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আধুনিকতার বিকাশে বিজ্ঞানের নানাবিধ আবিষ্কার( জেনারেটর, সোলার প্যানেল, আই পি,এস, এলইডি বাল্ব) এর ফলে হারিয়ে গেছে বহুল ব্যবহৃত এই হ্যাচাক লাইট যা সমাজের মানুষের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি বহন করে ।
এ বিষয়ে কথা হলে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের সহদেব বড়গাছা গ্রামের ডাঃ জালাল উদ্দিন (৬৫) বলেন, অনেক অনুষ্ঠানে এই হ্যাচাক লাইট ব্যবহার করেছি। এখন বহুদিন এটি আমার চোখে পরে নি । এটি এখন আর মানুষ ব্যবহার করে না। তবে বর্তমান প্রজন্মের কেউ এটির কথা নাও বলতে পারে কারন এটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।