এস আর,সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধিঃ
আগামী ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহীর তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘ প্রায় নয় বছর পর হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে সর্বত্রই চলছে আলোচনা। কে আসছেন নেতৃত্বে। কার হাতে যাবে আগামীর নেতৃত্ব। কে হবেন সভাপতি। এসব নিয়েই তুমুল আলোচনা।
তবে, ইতিপূর্বেই তৃনমুল নেতাকর্মীদের আস্হার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তানোর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সংগ্রামী সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার নাম। এর নানা কারনও রয়েছে। বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত। এজন্য তৃনমুলের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। যার কারণে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য অবিরাম ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ছুটে চলা। আনাচে কানাচে সব জায়গায় বিচরণ। প্রবীণ ও নবীনদের মাঝে নেতৃত্ব তৈরি। প্রতিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কঠোর পরিশ্রম। মুলত এজন্যই তার উপর ভরসা করছেন তৃনমূল ও দায়িত্বশীল নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত জোট সরকারের সময় লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। একেবারে ঘুনে ধরা যুবলীগ গঠন করে ‘চমক’ লাগিয়ে দেন। বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রচুর ভূমিকা পালন করে ময়নার নেতৃত্বে যুবলীগ চাঙ্গা হয়। অবশ্য এর পুরো কৃতিত্ব সাংসদ আলহাজ¦ ওমর ফারুক চৌধুরীর। বিগত জোট সরকার ও ২০১৩ সালের শেষের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ওই সম্মেলনে সাংসদ ফারুক চৌধুরীর আর্শীবাদে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন গোলাম রাব্বানী এবং সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুল্লাহ আল মামুন। তারা অবশ্য স্হানীয় সাংসদের আশীর্বাদেই পেয়েছিলেন পদ। এর কয়েক বছর পর আসে জেলা পরিষদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান প্রয়াত মাহবুব জামান ভুলু। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয় লাভ করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতি মোহাম্মদ আলী সরকার। বিদ্রোহীর হয়ে কাজ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
তানোর উপজেলা থেকে মোহাম্মদ আলী সরকারের পক্ষে কাজ করেন গোলাম রাব্বানী ও তার অনুসারীরা। শুরু হয় দলের ভিতরে দ্বন্দ্ব লবিং ও রুপিং। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে এমপির টিকিট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন আসাদের অনুসারী রাব্বানী। রাজনীতির মাঠে রাব্বানীর চলে কালো টাকার ছড়াছড়ি। নিমিষেই নিভে যায় রাব্বানীর সব স্বপ্নগুলো। রাজনীতির মাঠে রাব্বানী বর্তমানে চরম বিতর্কিত। কখনো সেভেন স্টার। আবার কখনো নিজেই নৌকা বিপরীত। আবার মোটরসাইকেল ও হাতুড়ী প্রতীকে ভাইকে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করিয়ে চরম বিতর্কের জন্ম দেন।
গত বছরের শুরুর দিকে তানোর ও মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে রাব্বানীর অনুসারীরা বিজয় হওয়ার পর পুনরায় ভাইকে আওয়ামী লীগে এনে গত ইউপি ভোটে নৌকার বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল প্রতীকে প্রার্থী করে পরাজিত হতে হয়। এভাবেই রাব্বানী জেলার পদ হারা এক নেতার কারণে চরম বিতর্কিত। শুধু তার ভাই নয় প্রতিটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে আরো বিতর্কিত হয়ে পড়েন রাব্বানী ও মামুন বলে জানান তানোর উপজেলা যুবলীগের সংগ্রামী সাধরণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন।
চাঁন্দুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মজিবর রহমান জানান, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি রাব্বানী ও মামুনকে সেচ্ছায় পদ ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। তাহলে তারা সম্মান পেলেও পেতে পারেন। তারা কিসের বলে আবার সভাপতি সম্পাদক হতে চান। আসলে লজ্জাবোধ যাদের নাই তারাই এসব করতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু সিনিয়র নেতারা জানান, রাব্বানী নাকি কোনদিন এমপির কাছে যাবে না। যখন দেখছে কোন উপায় নাই তখন এমপির কাছে ধরনা দেওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু এমপিও যানে তাদের চরিত্র সম্পর্কে। অথচ রাব্বানী একাই গেলেও মামুনকে নিচ্ছে না। আমাদের এবং তৃণমূলের জোরালো দাবি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সংগ্রামী সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নাকে সভাপতি করলে দলে কোন কিট থাকবে না। কারণ ময়না কখনো নৌকার বিরুদ্ধে যান নি। প্রতিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাটি কামড়ে ভোটের মাঠে থেকেছেন। রাব্বানী-মামুন অধ্যায়ের ইতি টানা সময়ের দাবি।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্ষিয়ান রাজনীতি বিদ শরিফ খাঁন জানান, পদে থাকার বা আসার সকল যোগ্যতা হারিয়েছে রাব্বানী-মামুন। নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে আবার পদে থাকবে বা আসবে এটা হতে পারে না। আমাদের দাবী ময়নার নেতৃত্বেই তানোর উপজেলা আ.লীগ সুসংগঠিত হোক। তাকেই দেয়া হোক তানোর আ.লীগের সভাপতি পদ বলে দাবী এই বর্ষিয়ান নেতার।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সংগ্রামী সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগ করে আসছি। কোনদিন নৌকার বিরুদ্ধে যায়নি। এটা দিবালোকের মতো পরিস্কার। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন। দল যদি মনে করে আমাকে দায়িত্ব দিলে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। কিংবা যাকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে তার নেতৃত্বে অতীতে যেভাবে কাজ করেছি ভবিষ্যতেও করে যাব ইনশাল্লাহ।