মোঃ এম এন উদ্দিন
পিরোজপুর প্রতিনিধি:
বিভিন্ন সময় রিক্সায় ফেলে রেখে যাওয়া কিংবা রাস্তায় পড়ে থাকা টাকা ও মূল্যবান জিনিসি যথাযথ ব্যক্তির কাছে কিংবা থানায় জমা দিয়ে অনেকেই এসেছেন আলোচনায়।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুড়িয়েছেন অনেক প্রশংসা। তবে এবার পিরোজপুরে ঘটেছে ঠিক এর উল্টো ঘটনা। রাস্তায় দূর্ঘটনায় আহত এক শিক্ষককে হাসপাতালে নিয়ে এসে তার পকেট থেকেই ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে এক অটোরিক্সা চালক যুবক।
তবে প্রযুক্তির কল্যাণে এ টাকা সে হজম করতে পারেনি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে টাকা নেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ায় তা ফেরত দিতে হয়েছে ওই যুবককে। রোববার রাতে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই অমানবিক এ কর্মকান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। তবে এ সময় পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন ওই শিক্ষকের ঘনিষ্ট অন্য আরেক শিক্ষক।
দূর্ঘটনার পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষক মারা গেছেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার সোয়া তিনটার দিকে পিরোজপুর শহরের করিমুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক মিলন কৃষ্ণ মজুমদার নিজের মোটরসাইকেলে করে একটি জমি ক্রয়ের জন্য টাকা বায়না দিতে শহরের আফতাবউদ্দিন কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। মিলন এবং সদর উপজেলার হুলারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক গৌতম মালাকার একত্রে ওই জমিটি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেন।
পিরোজপুর পৌরসভার সামনে পৌছার পর বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি মোটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মিলনের মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরপর তাকে সেখান থেকে গৌতম তাকে উদ্ধার করে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাযোগে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় মিলনের চিকিৎসায় হাসপাতালের কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগীতা করছিল হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরিহিত সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের অটোরিক্সা চালক মিন্টু (৫০)। এমনকি মিলনের পকেট থেকে বের করা মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনও গৌতমের কাছে জমা রাখে সে। এরপর গৌতম এবং মিন্টু উভয়েই মিলনের ডান পাশের পকেটে উপর থেকে হাত দেন। এ নিয়ে দুজনের সাথে কথা হয় বলেও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। এর এক ফাঁকে গৌতম পাশে থাকা অবস্থায় মিলনের ডাক পকেট থেকে টাকার একটি বান্ডেল বের করে তা নিজের লুঙ্গির মধ্যে লুকিয়ে সেখান থেকে সটকে পরে মিন্টু।
তখন মিন্টুর পরিচয় জিজ্ঞেস করার পর সে দ্রুত জরুরি বিভাগের কক্ষটি ত্যাগ করে বলে জানান সেখানে দায়িত্বরতর হাসপাতালের কর্মচারীরা।
তবে হাসপাতালে পৌছার পর মিলনের স্ত্রী জানায় যে তার স্বামীর পকেটে ৫০ হাজার টাকা ছিল। এরপরই খুলনা থেকে হাসপাতালের সিসিটিভি’র ফুটেজ দেখার উদ্যোগ নেয় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহিদুল ইসলাম। এরপর পুলিশের সহায়তায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হন যে অটোরিক্সা চালক টাকা নিয়ে সটকে পড়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম।
এরপর পুলিশ মিন্টু পরিচয় খুজে বের করার পর তার পরিবারের সদস্যরা চুরি হওয়া টাকা ফেরত দিয়ে যায়।
তবে টাকা উদ্ধার করে মিলনের পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোঃ মাসুদুজ্জামান। তবে এ ঘটনায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
দূর্ঘটনায় আহত শিক্ষক মিলন পরের দিন শনিবার খুলনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার স্ত্রী একজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং তাদের তিন মেয়ে পার্শবর্তী দেশ ভারতে বাস করে।
পিরোজপুর।
৩১.০৫.২০২২
Leave a Reply