নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বয়সের যেসব জায়গায় বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষাকে জোর দিতে হবে। কারণ ইংরেজি কেবল শিক্ষা নয়, এটি একটি হাতিয়ার। এর সঙ্গে আইসিটি পড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, যেই বিষয়ই পড়ুক না কেন আমি সবাইকে সব বিষয়ের সঙ্গে অবশ্যই সাহিত্য ও দর্শন পড়াতে বলব। কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর একজন মানুষের মধ্যে যদি সাহিত্যবোধ সঞ্চারিত না হয়, সাহিত্য যে জীবনবোধ তৈরি করে সেটি যদি সঞ্চারিত না হয়, দর্শনবোধ তৈরি না হয় তাহলে তার পক্ষে প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। খুব বেশি পড়তে হবে তা নয়, কিন্তু এগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের কেবল ডিগ্রি দিয়ে, গ্র্যাজুয়েট করে ছেড়ে দিলেই হবে না। তাদের কর্মদক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, যা শিখলাম তা প্রয়োগ করতে শিখলাম না। এ শিক্ষা আসলে কোনো কাজে আসে না; সেই শিক্ষা দিয়ে আমি হয়তো উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারব। কিন্তু সেই শিক্ষাকে সঠিকভাবে জীবনে প্রয়োগ করে আমি এগিয়ে যেতে পারব না।
তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছি। যেখানে শিক্ষার্থীরা একটি আনন্দময় পরিবেশের মধ্যে পড়বে। শিক্ষাটাই হবে আনন্দময়। তারা পড়ে পড়ে শিখবে। খেলাধূলার মধ্যে শিখবে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে শিখবে এবং শিক্ষাটা কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। করে করে তারা নানা কিছু শিখবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্ব সফট স্কিলস্ এর কথা বলছে। আমি শুধু পড়াশোনা শিখলাম, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করলাম, আমি কারিগরি বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করলাম, সেটাও যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে আরও কিছু দক্ষতা, আরও কিছু মূল্যবোধের প্রয়োজন রয়েছে।
কমিউনিকেশন স্কিলস্ বাড়াতে হবে, সুক্ষভাবে চিন্তা করার দক্ষতা থাকতে হবে, সমস্যা নিরূপণ করা এবং সমাধানের করার দক্ষতা, সহযোগিতামূলক কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার দক্ষতা, নেতৃত্বের দক্ষতা এমন আরও অনেক দক্ষতা আছে যা আমাদের শিক্ষার্থীদের অর্জন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কথা তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার কেবল একটি ছাপানো পুস্তিকা নয়। এ নির্বাচনী ইশতেহার শুধু নির্বাচনের জন্যও নয়। এটি জনগণের সঙ্গে, ভোটারের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের একটি চুক্তি। জনগণ আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিলে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে। আর জনগণ তার সুফল পায়। আজকের বাংলাদেশ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু কন্যার ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার করেছিলেন। এখন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি। পদ্মা সেতু কেবল পদ্মা সেতু নয়- এটি আমাদের আত্মমর্যাদা-আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, আমাদের বিজয়ের প্রতীক।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিক ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ওসমান গনি তালুকদার।
সমাবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম ও ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদভুক্ত ১০টি বিভাগের ৪ হাজার গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি দেয়া হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় দুজন শিক্ষার্থীকে ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ ও নয়জন শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ দেয়া করা হয়। সমাবর্তন সভাপতি ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি তাদের অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।