আবু সাঈদ (স্পেশাল করসপনডেন্ট) ।
আসন্ন জাতীয় বাজেটে স্কুল এবং মাদরাসাসহ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।
সেই সাথে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও আমলাদের বেতনের ৬০ শতাংশ ও সরকারি ব্যয়ের ৫০ শতাংশ খরচ কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষাখাতে ভারতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে সেই পরিমান বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বলছে, বছরের পর বছর শিক্ষাখাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখার ফলও আমরা দেখছি। জ্ঞান সূচকে ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। আমাদের ওপরে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভূটান, ভারত, পাকিস্তান সবাই। উচ্চশিক্ষা খাত কিংবা প্রাথমিক শিক্ষার দিক থেকেও আমাদের অবস্থান আরও নিচে।
বছরের পর বছর এ খাতে বরাদ্দ কম রেখে একটা বোকা জাতি বানানো হচ্ছে আমাদের। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাজেট বৃদ্ধির পরিবর্তে দেশের উচ্চশিক্ষা খাত ও গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি মাদরাসাসহ সব শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গ্রাম ও শহরে শিক্ষার মানের তারতম্য নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম মানোন্নয়ন ঘটাতে বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণা, আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসনের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। কারিগরি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কৃষি শিক্ষার প্রসারে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ১৬ দফা দাবি প্রস্তাব করেছে। দাবিগুলো হলো, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে জনকল্যাণমুখী ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালু করতে হবে। ঋণ নির্ভর বাজেট থেকে অতিদ্রুত ফিরে আসতে হবে। প্রবৃদ্ধিতে অসমতা দূর করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে। বিদেশ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে দামি কিছু বিলাসপণ্য আমদানি কয়েক মাসের জন্য বন্ধ করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ সচল রাখতে হবে। আমদানির ক্ষেত্রে খাদ্যসামগ্রীর করের হার কমাতে হবে। আমদানি ও রপ্তানির সার্বিক মূল্যে ভারসাম্যতা আনতে হবে। জনপ্রশাসনে বাজেট কমিয়ে ১২ শতাংশের বেশি দেয়া যাবে না। এছাড়াও প্রশাসনিক ব্যয় ও মন্ত্রী-আমলাদের বেতনে শতকরা ৬০ শতাংশ খরচ কমাতে হবে। সরকারি গাড়ি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় শতকরা ৫০ শতাংশ কমাতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যস্ফীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর ফাঁকি এবং মুদ্রা ফাঁকি বন্ধ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেমন বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের কর ফাঁকি বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল কর ফাঁকি রোধ করে কর আদায় করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে টাকা পাচার রোধ, ঋণখেলাপী বন্ধ করতে, এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ টাকার জিনিস হাজার টাকায় ক্রয়ের মত জালিয়াতি বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াবে না এমন অবকাঠামো খাতে এ বছর বাড়তি অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করতে হবে।