আব্দুল মজিদ মল্লিক, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে অটো ভ্যান চালক এক যুবকের হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। টাকা চুরির সন্দেহে ও টাকা ফেরত না দেওয়ায় বন্ধু নাহিদ হোসেন অটো ভ্যান চালক যুবক হযরত আলী (২৫) কে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ নাহিদের নির্মানাধীন একটি ঘরের মেঝের মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে থানা পুলিশ উপজেলার সদরের পূর্ব বালুভরা গ্রামের নাহিদ হোসেনের নির্মানাধীন একটি ঘরের মাটির মেঝে খুড়ে লাশটি উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডের শিকার হযরত আলী উপজেলা সদরের পূর্ব বালুভরা গ্রামের জমসেদ আলী মন্ডলের ছেলে। এ হত্যাকান্ডের মূলহোতা উপজেলার সদরের পূর্ব বালুভরা গ্রামে মৃত রেজ্জাকের ছেলে মো: নাহিদ হোসন (২৬) কে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১২ টায় রাণীনগর থানা পুলিশ আয়োজিত থানা প্রঙ্গনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) গাজিউর রহমান পিপিএম। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে রাণীনগর থানার ওসি শাহিন আকন্দ, পুলিশ পরিদর্শক (ডিএসবি) নন্দিতা সরকারসহ রাণীনগর থানা পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) গাজিউর রহমান জানান, নিহত যুবক হযরত আলী পেশায় একজন অটো চার্জার ভ্যান চালক। পারিবারিক কলহের জেরে হযরত আলী বেশ কিছু দিন থেকে নিজের বাড়িতে থাকতেন না। পার্শ্ববর্তী বন্ধু নাহিদ হোসেনের বাড়িতে থাকেন। গত ৩ জুন রাত ৯ টার দিকে হযরতের ব্যবহৃত অটো চার্জার ভ্যান গ্যারেজে চার্জে রেখে বন্ধু নাহিদের বাড়িতে ঘুমাতে যায়। এরপর ৪ জুন থেকে নিখোঁজ হন হযরত। পরিবারের লোকজন হয়রতকে নিখোঁজের ৬ দিনেও খোঁজাখুজি করে না পাওয়ায় তার বাবা জমসেদ আলী ও ফুফু দোলোয়ারা বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে থানায় আসেন। এ সময় হযরতের বাবা ও ফুফু পুলিশকে কিছু তথ্য দেয়। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাচাই করে হযরতের বন্ধু নাহিদ হোসেনকে আটক করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদের দেওয়া তথ্যমতে নাহিদের বাড়ির নির্মানাধীন একটি ঘরের মেঝের মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় হযরতের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত নাহিদের ড্রয়ারে রাখা ১০/১৫ হাজার টাকা বন্ধু হযরত আলী চুরি করেছে মর্মে সন্দেহ করেন নাহিদ। এরপর ৪ জুন সকালে হযরতকে সেই টাকাগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকলে হযরত তার কোন টাকা নেয়নি মর্মে ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে বাকবিতন্ডা ও মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। এদিন সকালেই নাহিদের কিস্তির টাকা প্রয়োজন হওয়ায় আবারও বন্ধু হযরতের কাছে টাকা চায় নাহিদ। ওইদিন সকাল অনুমানিক ৯ টার দিকে হযরত বন্ধু নাহিদের ঘরের ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াতেছিলো আর ওই সময় নাহিদ ঘরের খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলো। এমতবস্থায় হযরত কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই নাহিদ তার ঘারের গামছা দিয়ে পিঠন দিক থেকে হযরতের গলায় গামছা পেঁচিয়ে খাটে ফেলে পিঠে হাটু দিয়ে ঠেসে ধরে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর হযরতের প্যান্টের পকেটে থাকা ৪ হাজার টাকা বের করে নেয় নাহিদ। এরপর হযরতের লাশ গুমের পরিকল্পনা করে ওইদিন বিকাল ৪ টার দিকে নাহিদ নিজেই তার নির্মানাধীন একটি ঘরের মাটির মেঝেতে গর্ত করে হযরতের লাশ বেডসিট দিয়ে পেঁচিয়ে প্লাষ্টিকের বস্তায় ভরে ঝুট কাপর দিয়ে বেঁধে মাটির নিয়ে পুতে রাখে বলে নাহিদ স্বীকার করেছেন।
এ ঘটনায় নিহত হযরতের বাবা জমসেদ আলী মন্ডল বাদি হয়ে রাণীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামি মুলহোতা নাহিদ হোসেনকে গ্রেফতার করে আজ শুক্রবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মো,আব্দুল মজিদ মল্লিক
নওগাঁ।
১০/০৬/২২