এস আর,সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধিঃ
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী মে মাসের ১৩ তারিখ থেকে রাজশাহীর বাজারে এসেছে সুমিষ্ট আম। গুটি আম দিয়ে শুরু হলেও গোপালভোগ আমের দিকে নজর ছিল সবার। তবে, গতবছরের তুলনায় বাজারে প্রকারভেদে দ্বিগুণ থেকে তিনগুন আমের দাম।
আমচাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়েছে। এর ফলে বাগানে আমের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। উৎপাদন কমে যাওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম।
বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ের প্রথম দিন থেকেই রাজশাহীর বাজারে বিভিন্ন গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম উঠেছে। গোপাল আম বেশিদিন বাজারে থাকে না। বর্তমানে বাজারে গোপালভোগ ৪০ শতাংশ বাজারে আছে।
রাজশাহীর সাহেবাজার কাঁচাবাজার, উপশহর নিউমার্কেট, রেলগেট, স্টেশন, শালবাগানসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমী আম। খুচরা বিক্রেতারা ভ্যানে করে বিক্রি করছেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আবারো কেও পাড়া মহল্লায় ফেরি করে।
১০ জুন শুক্রবার সকালে নগরীর শালবাগান আমের আড়ত থেকে গোপালভোগ আম নিয়ে উপশহর এলাকায় বিক্রি করছেলেন মানিক। তিনি বলেন, গাছে এবার আম খুব কম। তাই দাম বেশি। গোপালভোগ আম বিক্রি করছি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
মে আমের আকার ও রং কিছুটা খারাপ সে আম বানেশ্বর বাজারে রিজেক্ট (ক্যাট) আম বলে। সেই আম পাইকারি ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ(৩৫-৪০ টাকা প্রতি কেজি) দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার সেই একই আম রাজশাহীর খুচরা বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। তারপরও এসব আম পাইকারি বাজারের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামে কিনছে অধিকাংশ মানুষ।
আর এবার গাছে তেমন আম নেই। ব্যবসায়ীদের কাছে আম কিনতে গেলে তারা এসব কথা বলছেন।
পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মণ কাঁচা গোপালভোগ আম চাষিদের কাছ থেকে আড়তগুলোতে কেনা হয়েছে ২৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। দু-এক দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অন্যান্য আমের মধ্যে ল্যাংড়া প্রতি মণ (৪০ কেজি) ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে কমদামী আম লক্ষন ভোগ বা লখনা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬০০ টাকা মন দরে। যার প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং গুটি জাতের আম ১৩ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, রাজশাহীর বাজারে বেশি দেখা মিলছে গুটি ও গোপালভোগ আমের। অন্য আম নেই বললেই চলে। কেবল আসতে শুরু করেছে ল্যাংড়া আম। ৮০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
শালবাগান ফলের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারে আমের বেশ চাহিদা রয়েছে। অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে আম। খুচরা কিংবা পাইকারি বাজারের তুলনায় অনলাইনে প্রতিকেজি আমে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বানেশ্বর আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইয়ের কানসাটের পরেই বানেশ্বর বাজার। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার আম বেঁচাকেনা হয়। বাজারে আমচাষি, ব্যবসায়ীরা এবার বেশ উৎফুল্ল। ল্যাংড়া আসতে শুরু করেছে। দাম গতবারের তুলনায় এবার মণে ৫ থেকে ৬০০ টাকা বেশি। এখান থেকে আম কিনে লাভ করেই বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। শহরের ভেতরে আরো বেশি দাম। হাটে যে আম ৫০ টাকা কেজি ,সেটা খুচরা বাজারে ৮০ টাকার কম পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা ও বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমবাগান রয়েছে ৯০ হাজার ৮৯৮ হেক্টর। এসব জমিতে আমের উৎপাদন হবে প্রায় ৯ লাখ ৫৬০ মেট্রিকটন আম। হেক্টরে প্রায় ১০ দশমিক ৫৬ টন হিসেবে ফলন ধরা হয়েছে। প্রতিকেজি আমের দাম গড়ে ৬০ টাকা হিসেবে ৫ হ্জাার ৭৬০ কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভবনা রয়েছে
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বাজারে সর্বপ্রথম গুটি জাতের আম আগে আসে। পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা আম বাজারে আসে। এখন বাজারে গোপাল, খিরসাপাত, রানিপশন, হিমসাগর ও লখনা।