লিটন সরকার রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় বর্ষার পানি পুরোপুরি আসার আগেই নদী-নালা, খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট ছেয়ে গেছে চায়না জালে(রিং জাল) ও কারেন্ট জালে। ঋতু বৈচিত্রে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল। আর এই সুযোগ কাছে লাগিয়ে নতুন পানিতে ডিম দিতে আসা মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে রৌমারী উপজেলার সবুজ পাড়া, নতুন বন্দর, সোনাভরি নদী,হলহলি,নওদাপাড়া,বড়াইকান্দি, দঃখনজনমারাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। জালের মালিকরা বলছেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না। অপর দিকে মৎস্য কার্যালয় বলছে, এই জাল সর্বনাশা। এটা বন্ধ করা হবে।
রসুলপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন জানান, পানিতে যদি মাছ থাকে তবে চায়না জালে তা ধরা পড়তেই হবে। অপরদিকে গুচ্ছ গ্রামের কুদ্দুস নামে একজন বলেন, কারেন্ট জাল দিয়ে গুঁড়া মাছ(ছোট মাছ)সহ বড় মাছ ধরা খুব সহজ। কারণ এই জাল বিশেষ ভাবে তৈরি। যা মাছের জন্য সর্বনাশা ফাঁদ।
চরবামনের চর গ্রামের খইরুল ইসলাম চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ঝুড়িতে ছোট পোনা মাছ সহ অধিকাংশই মাছ ডিমওয়ালা। ডিমওয়ালা মাছ ধরা ঠিক কি না জানতে চাইলে খইরুল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সংসার চালানোর জন্য মাছ ধরি। ভালো-মন্দ বুঝি না। সবুজ পাড়া গ্রামের সধন, খোকন দাস ,মিলন,সাগর দাস,মিঠুন, দঃখনজনমারা গ্রামের সাইদুলসহ আরোও অনেকে
চায়না জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করে।
স্থানীয়রা বলেন,বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ কর্মহীন হওয়ায় এসব মাছ ধরা আরো বেড়েছে। আগে যেসব লোক অনান্য কাজকর্ম করে ব্যস্ত সময় পার করতেন, এখন তারা এসব মাছ ধরছেন! তবে দিন দিন যে হারে কারেন্ট জাল ও চায়না জাল দিয়ে মা মাছ সহ গুঁড়া মাছ ধরা হচ্ছে, তাতে এলাকায় চলতি মৌসুমে দেশি প্রজাতির মাছের তিব্র সংকট দেখা দিবে। আমরা দ্রুত এই জালগুলো নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
কোথায় থেকে এইসব জাল সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে চায়না জাল এবং এলাকায় কারেন্ট জাল ক্রয় বিক্রয় করা হয়। আমরা সেখান থেকে নিয়ে আসি।
মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অবৈধ ভাবে চায়না রিং জাল বন্ধ করার জন্য জোরালো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃবদরুজ্জামান মিঞা রানা সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেন,চায়না জাল ও কারেন্ট জালসহ যে সব জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা হয় সেসব জাল আমাদের দেশে নিষিদ্ধ।সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বনাশা এই জাল বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট আশরাফুল ইসলাম রাসেল বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানিনা। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।তিনি আরোও বলেন,দেশীয় প্রজাতির মাছ আমাদের রক্ষা করতে হবে।