বুলবুল হাসান, বেড়া উপজেলা প্রতিনিধি :
পরচুলা বা নকল চুল যা মানুষের মাথায় ব্যবহার যোগ্য আবরণ বিশেষ যা মানুষের চুল পশুর চুল বা কৃত্রিম তন্তু দ্বারা নির্মিত। মানুষের মাথায় চুল উঠে গেলে সৌন্দর্য্য বাড়াতে পুনরায় পরচুলা ব্যবহার করা হয়। পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার গ্রামীণ নারীদের অনেকেই পরচুলার কাজ করে স্বনির্ভর হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী তাঁত পল্লীতে এখন পরচুলা কারখানা গড়ে উঠেছে। এই গ্রামের দশটি পরিবার এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত। সেই সাথে একশত জন লোক জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানে ক্ষুদ্র পরিসরে ঢাকা সাভার নবী নগর বিভিন্ন কারখানা থেকে উদ্দোক্তারা পরচুলার কাঁচামাল সংগ্রহ করে নারীদের দিয়ে কাজ করান। এ কাজে নারী শ্রমিকদের বেশ উৎসাহ দেখা যায়। এক জন পরচুলা শিল্পী প্রতিমাসে তের থেকে পনেরো হাজার টাকা উপার্জন করতে পারে। একজন শ্রমিক প্রতি মাসে দশ থেকে এগারো টা মাথায় চুল লাগাতে পারে। মাথা প্রতি বারোশত তেরোশত টাকা করে পায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্যানুসারে গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের মানব চুল ও পরচুলা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
পরচুলা শিল্পী শামছুর নাহার বলেন সংসারের কাজের অবসবে পরচুলা বানিয়ে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসারে অভাব মোচন করতে পারি। উপার্জন কৃত টাকা দিয়ে বসবাসের জন্য একটা ঘর দিয়েছি। সন্তানের লেখাপড়ার পিছনে খরচ করছি।
পরচুলা শিল্পের উদ্দোক্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন আমাদের কাছে অনেকেই কাজ চায় কিন্তু কোম্পানি আমাদের যে পরিমাণে অর্ডার দেয় এর বাইরে আমরা কাজ করাতে পারি না। কারণ পরচুলা কোম্পানি কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্পের প্রসার ঘটনো হলে অনেকেরই কর্মসংস্থান সম্ভব। বিদেশে পরচুলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ বলেন নারীদের পাশাপাশি অনেক কিশোর এই কাজে জড়িত হওয়ায় এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সবুর আলী বলেন পরচুলা শিল্পের কাজের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে কর্মক্ষেত্র তৈরি করে অর্থনৈতিক ভাবে দরিদ্রদের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা এবং বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।