নিউজ ডেস্কঃ
ঘুষ নিয়েও কাজ করে না দেয়ায় প্রতিবাদ জানানোয় শিক্ষাভবনের কর্মচারীর হাতে গত এপ্রিল মাসে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন মো. আমিনুর রহমান নামে একজন শিক্ষক। কিন্তু দুইমাস পেড়িয়ে গেলেও সে বিষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অভিযুক্ত কর্মচারী সৈয়দ লিয়াকত আলীও বহাল তবিয়তে আছেন। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিষয়টি শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার সময় মহাপরিবচালক দেশের বাইরে ছিলেন। ফিরে এলেও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানননি পরিচালক (প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী ও উপ-পরিচালক বিপুল কুমার বিশ্বাস। অন্যভাবে বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত কর্মচারী লিয়াকতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেন মহাপরিচালক।
কিন্তু গত সোমবার পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ। মাসিক সমন্বয় সভায় মহাপরিচালক জানতে চান, ‘কেন লিয়াকতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রথম ধাপ হিসেবে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করার কথা ছিলো। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জনতার কথা২৪ কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছেন, প্রশ্নফাঁস ও বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বিপুল কুমার মাথা নীচু করে ছিলেন।
বিপুলের পিএস হাবিব মে মাসে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে ধরা খেয়ে এখন জেলে রয়েছেন। বিপুলের মতামত জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগীরা জানান, লিয়াকত সিন্ডিকেটের হাতে এখনো জিম্মি শিক্ষকরা। কোনো শিক্ষক সংগঠনও লিয়াকতের শাস্তির দাবিতে বিবৃতিও দেয়নি। বরং বদলি ও এমপিও বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষক সংগঠনের নেতারা লিয়াকতকে সমর্থন দিয়েছেন।
সম্প্রতি সাভারে শিক্ষক উৎপল কুমার বিশ্বাসকে হত্যা ও নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষাভবনে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আবারও সামনে এসেছে।
এদিকে কাগজে কলমে ওই শিক্ষকের ‘সমস্যা সমাধান’ করা হলেও জটিলতা ‘লিয়াকত সিন্ডিকেট’ এখনো পুষে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান। তিনি লিয়াকতসহ সিন্ডিকেটের সবার শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
গত ৫ এপ্রিল লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষাশহর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান শিক্ষা ভবনে এসে লাঞ্ছিত হন। সেদিন তিনি বকেয়া ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা বেতন-ভাতা ছাড় করাতে এসেছিলেন। ঘুষ দিয়েও কাজ না হওয়ায় তিনি গিয়েছিলেন অধিদপ্তরের কর্মচারী সৈয়দ লিয়াকত আলীর কাছে।
তাতে বেজায় গোস্বা হয় লিয়াকত। শিক্ষক আমিনুরের ওপর চড়াও হন তিনি। অধিদপ্তরের দোতলায় নিজের কক্ষের ভেতর ও বাইরে ওই শিক্ষককে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে লিয়াকতের বিরুদ্ধে। এ সময় হইচই-চিৎকারে তৃতীয় তলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নীচতলায় কর্মরত আনসার সদস্যরাও ছুটে আসেন। তাদের মধ্যস্থতায় রক্ষা পান ওই শিক্ষক।
জানা গেছে, আমিনুর রহমান ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অবসরে যান। কিন্তু তার জন্ম তারিখ ভুল ছিলো। সঠিক জন্ম তারিখ অনুযায়ী ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরে জন্ম তারিখ সংশোধন করার পর তাকে আগের পদে পুর্নবহাল রাখা হয়। তাকে বকেয়া বেতন দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে টাকা পাঠিয়ে দেয়া হলেও তা তিনি তুলতে পারছেন না। এ নিয়ে লিয়াকত সিন্ডিকেট তার কাছে ঘুষ দাবি করে। অভিযোগ আছে লিয়াকতসহ অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেট এরকম জটিলতায় পড়া শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ নেন।
নির্যাতিত শিক্ষক আমিনুর রহমান বুধবার সকালে জনতার কথা২৪ কে বলেন, এখনো টাকা পাইনি। তারা টাকা ছাড় করেছে ঠিকই এদিকে এমপিও শিট থেকে আমাকে বাদ দিয়েছে। এটি আমার প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ও অধিদপ্তরের লিয়াকতসহ একটি সিন্ডিকেটের কাজ। গত এপ্রিলে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট হলে তারা কাগজে কলমে সমস্যার সমাধান করেছেন, কিন্তু অধিদপ্তরের ওই কর্মচারীর ইশারায় এখানেও ঝামেলা করা হয়েছে। তারা এমপিও শিট থেকে আমাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এতে টাকা তুলতে পারছি না।
শিক্ষক আমিনুর রহমান আরও বলেন, এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে একটি চক্র। তারা আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেই ঝামেলা পাকিয়েছিলো। গত এপ্রিলে তারা অধিদপ্তরে যে জটিলতা করেছিলো সেটিও ছিলো বানানো। সিন্ডিকেটের কেউ কেউ মাঠ পর্যায়ে থাকে, তাদের ইশারায় কাজ হয়, তাদের ইশারায় হয়না। আমি এদের শাস্তি চাই।
জানা গেছে, বেনামীতে লিয়াকতের আছে আউটসোর্সিং কোম্পানি। সেখান থেকেই শিক্ষা ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন প্রকল্পে জনবল সরবরাহসহ নানা অনিয়মে জড়িত লিয়াকত। এছাড়া এমপিও সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জড়িত সে।