মো. মিলন মোল্লা, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ইতিমধ্যে নদ-নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে মাছের প্রজনন মৌসুম। আর মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ঙ্কর চায়না দুয়ারি জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে নিষিদ্ধ ‘চায়না দুয়ারি’ জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করার মহোৎসব।
জানা গেছে, নদীতে ও পুকুরে থাকা পানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ চায়না দুয়ারীর এই জালে নিধন হচ্ছে। এতে ওই এলাকার নদ-নদী ও পুকুরে ক্রমেই দেশীয় জাতের মাছ কমে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হচ্ছে।
সরেজমিন পদ্মা নদীসহ ভাতছালা, দিয়ারবিল ও গোপীনাথপুর বিলে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য বাঁশের খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে আর খুঁটিতে বেধে রাখা হয়েছে চায়না দোয়াড়ি। কমপক্ষে ৮০ ফুট লম্বা একেকটি ফাঁদ।
এদিকে উপজেলার বয়রা, হারুকান্দি ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ৮ কি.মি এলাকায় পদ্মাপাড় রক্ষাবাধ রয়েছে। এ বাঁধের আন্ধারমানিক খালপাড় বয়রা, দাশকান্দি বয়রা,দড়িকান্দি, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বকচর, আলগীচর, জগনাথপুর, রামকৃষ্ণপুর, হারুকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর, হারুকান্দি এলাকার কয়েকটি জায়গায় জিও ব্যাগ কেটে চায়না দোয়ারি (জাল), সাধারণ দোয়ারি ও জিও ব্যাগে বাঁশ দিয়ে গর্ত করে চায়না জাল বেধে রাখায় বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
‘চায়না দোয়ারী’ দিয়ে মাছ শিকারি কয়েকজন জেলে জানান, তারা এই বর্ষায়ই এ ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার করছেন। একেকটি চায়না দোয়ারীর দাম পড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। সহজে মাছ ধরা পড়ে। পরিশ্রমও কম, আয় বেশি।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বিল্টু মিয়া নামের এক মৎস্য শিকারী জানান, আমি চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরিনা। বাঁশের তৈরি দোয়াড়ি দিয়ে মাছ ধরি। আমি পদ্মায় দোয়ারি দিয়ে মাছ ধরি। মাঝে মাঝে বিলেও ধরি। আমাদের গোপীনাথপুর বিলে ৮০ ভাগ জেলে চায়না দোয়াড়ি দিয়ে মাছ ধরে।
চালা ইউনিয়নের হারেস নামের এক মৎস্য শিকারী বলেন, ভাতছালা বিলে শতকরা ৯০ ভাগ মৎস্য শিকারী চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরে।
চালা ইউনিয়নের সট্টি গ্রামের কালাম দেওয়ান বলেন, পুরো ভাতছালা বিলে হাজার হাজার জাল পেতে রাখা হয়েছে। ছোট ছোট পোনা ধরছে তারা। আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকেও জানিয়েছি।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন বলেন, চায়না দোয়াড়ি দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে আমার ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের বেরি বাধেরও ক্ষতি করছে মৎস্য শিকারীরা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।
হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, চায়না দোয়াড়ি বা জালের বিরুদ্ধে অভিযান দেয়া হবে। কয়েকদিন আগে ইউএনও স্যার আর আমি ১ হাজার মিটার জাল জব্দ করেছি। এছাড়া চায়না জাল দিয়ে মাছ না ধরার জন্য মাইকিংও করা হয়েছে।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ধূলসুরা এলাকায় কয়েকদিন আগে ১ হাজার মিটার চায়না জাল ধ্বংস করেছি। কারেন্ট জাল এবং চায়না দোয়াড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।