নিউজ ডেস্ক :
তিনি বলেন শিক্ষাই হবে পরবর্তী মেগা প্রকল্প। যার মধ্য দিয়ে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে উন্নত বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
রোববার বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুল আয়োজিত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি ‘আমরাও পারি’। পদ্মা সেতু নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। চলমান আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প কয়েক বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবসহ বিশ্বময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে পরিবর্তন ও অগ্রগতি হচ্ছে তাতে আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরাও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সফল অংশীদার হতে চাই। শিক্ষাক্ষেত্রে সফট স্কিল আমাদের সংস্কৃতির মধ্যেই ধারণ করতে মনোভাব স্থির করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সামনে পরিবর্তনের বদলে রূপান্তর আসছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে আনন্দের সাথে শিখতে পারে, হাতে-কলমে জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং তা প্রয়োগ করতে পারে, শিক্ষা যাতে বাস্তবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, শিক্ষা যাতে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে সেজন্য কারিকুলামসহ শিক্ষাধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে। আমাদের নতুন কারিকুলায় শিক্ষার ফোকাসগুলো বদলে গেছে। মুখস্ত বিদ্যা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের বাস্তবিক শিক্ষায় এগোতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া জীবনকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। নিজেদের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা কেউই প্রযুক্তির বাইরে নই। প্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে আমাদেরও সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য আমাদের উদ্ভাবন করতে হবে। উদ্ভাবনা ছাড়া আমরা এগোতে পারবো না। আমরাই উদ্ভাবন করতে চাই, আমরাই নেতৃত্ব দিতে চাই।
রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে সড়কপথে তিনঘণ্টায় খুলনায় আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবি। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন আমরা ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন আমরা ইনোভেটিভ বাংলাদেশ হতে চাই। আমরা সবাই এর সঙ্গী হবো।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। জ্ঞান সৃষ্টি করতে হলে গবেষণা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে পরীক্ষার ভয় দূর করতে হবে। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করা হচ্ছে। যা উদ্দেশ্যমূলক ও অবান্তর
ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা সব ধর্মের মানুষের চিন্তা-ভাবনা পড়াশোনার মধ্যেই রাখছি। আগেও যেমন ধর্মশিক্ষা আবশ্যিক ছিলো, এখনও আবশ্যিক আছে। এটি বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে। যারা ধর্মের নামে অপপ্রচার করে, যারা দেশকে পিছিয়ে দিতে চায় তারাই মাঠ গরম করতে এমন অন্যায় সুযোগ নিচ্ছে। এজন্য কোনো কিছু বলার আগে সঠিক তথ্য জানা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমাদের প্রস্তুতি ও দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে বড় মাইলফলক। এটা আমাদের চিন্তার জগতে পরিবর্তন সূচিত করবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে এবং ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি যৌথ উদ্যোগ ও গবেষণার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনে উৎসাহ জোগাবে। তিনি এই সম্মেলনকে অত্যন্ত সফল ও চমৎকার বলে আখ্যায়িত করেন।
একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর টর্চারসেলকে বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় তিনি ইউজিসি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটি সংরক্ষণের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে জানতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। চিফ প্যাট্রন হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। প্যাট্রন হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আফরোজা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাস।
সমাপনী পর্বে সম্মেলনের আউটকাম বা ফলাফল তুলে ধরেন প্রফেসর ড. মো. আশিক উর রহমান। এছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানে ৪ জনকে ‘বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড’ ও একজনকে বিডি স্টিম বেস্ট স্টুডেন্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। সমাপনী পর্বে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রিফ্লেকশন এন্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে বিকাল সোয়া চারটায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ম্যুরাল কালজয়ী মুজিব এ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী ক্যাম্পাসে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ ভবনের উপাচার্যের সভাকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও ভৌত অবকাঠামোগত অগ্রগতি পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গবেষণা