বিকাশ রায় বাবুল, নীলফামারী :
তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে - আরো কিছু সময় তুমি থাক আমার পাশে ; হাতপাখা নিয়ে এরকম অনেক গান আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই শোনা গেলেও বর্তমানে যান্ত্রিকতার এ যুগে ক্রমেই কমে গেছে হাতপাখার ব্যবহার।
বহুকাল পূর্ব থেকেই গ্রাম কিংবা শহরাঞ্চলের মানুষ প্রচন্ড গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে ব্যবহার করত এই হাতপাখা।
গরীব কিংবা ধনী সবার বাড়ীতেই ছিল হাতপাখা। যা ছিল মানুষের নিত্যসঙ্গী। এমনকি কোন আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে গেলেও মানুষজন এটি সঙ্গে করে নিয়ে যেত।
একসময় হাটবাজারে পাওয়া যেত তালপাতার তৈরী, কাপড়ের তৈরী ও বিভিন্ন রংয়ের সুতো দিয়ে তৈরী বাহারি ডিজাইনের হাতপাখা তবে এর পরবর্তী সময়ে প্লাষ্টিকের তৈরী হাতপাখাও পাওয়া যেত। এগুলো ছোট ও মাঝারি ধরনের হত। দাম ছিল প্রায় ১০-২৫ টাকা।
গ্রামীণ নারীরা তাদের গৃহস্থলি কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাপড় দিয়ে তৈরী হাতপাখায় তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় সুই সুতোর মাধ্যমে বিভিন্ন নকশাসহ প্রিয়জনের নাম লিখত।
আমাদের সমাজের একটি জনগোষ্ঠী হাতপাখা তৈরী ও বিক্রি পেশার সাথে সম্পৃক্ত থেকে তাদের জীবিকাও নির্বাহ করত।
কিন্তু বর্তমানে আধুনিক জীবনযাত্রার বিকাশে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন আবিষ্কার (ফ্যান, এসি, এয়ারকুলার ) এর ফলে আর তেমন চোখে পরে না বহুল ব্যবহৃত এই হাতপাখার ব্যবহার।
অবশ্য এখনো মেডিকেল, বাসস্ট্যান্ড,লঞ্চঘাট সহ দু-একটি জায়গায় এর সীমিত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে যেন মানুষের মনে হয় এর প্রয়োজনীয়তার কথা।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সাধন চন্দ্র অধিকারী বলেন, ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাতপাখার বাতাসে স্বস্তির ঘুম ঘুমাইতাম। ছোট বেলার সেই দিনগুলির কথা আজও আমার মনে পড়ে। সেই দিনগুলি আজও আমার স্মৃতিতে ভাসে যা কখনোই ভোলার নয়।