নিউজ ডেস্ক :
জয়বানুর বয়স ১০৯ বছর। নেত্রকোনার সদর উপজেলার চুচুয়া মারাদিঘী গ্রাম থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে শহরে এসেছেন। শ্রাবণের অসহনীয় গরম উপেক্ষা করেই পেটের দায়ে ভিক্ষায় বেরিয়েছেন জয়বানু। তিনি থাকেন অন্যের বারান্দায়।
বৃদ্ধা জয়বানু জানান, গত ৭-৮ বছর আগে মারা যান তার জীবনসাথি আবসর আলী। সংগ্রামের (মুক্তিযুদ্ধ) আগে থেকে শহরের সাতপাই নদীর পাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
তিনি জানান, বিয়ের পর অনেক দিন সন্তান না হওয়ায় এক কন্যাসন্তান দত্তক নিয়েছিলেন। এরপর নিজের দুই মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। এরপর একসময় ভিটেটাও বিক্রি করে দিতে হয়। বড় মেয়ে হালেমাকে বিয়ে দেন সুনামগঞ্জের মধ্যনগর গ্রামে। তারও নেই কোনো সন্তান।
ছোট মেয়ে সুলেমাকে বিয়ে দেন নিজ গ্রামেই রাজমিস্ত্রি খোকনের কাছে। তার তিন ছেলে এক মেয়ে। বৃদ্ধা জয়বানু বেশির ভাগ সময় বড় মেয়ের সঙ্গেই মধ্যনগর থাকতেন। সম্প্রতি বন্যায় বড় মেয়ের আবাসস্থল ভাসিয়ে নিলে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা নিয়েছিলেন।
জয়বানু বলেন, পানি কমলে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে গত চার দিন হয় নিজ গ্রামে ছোট মেয়ের কাছে ফিরে আসেন। এই বয়সে চিড়া-মুড়িও যেন বেশিদিন খাওয়া যায় না। তাই শহরের পরিচিত বাড়িগুলোতে এসেছেন ঈদের মাংস নিতে। সব বাড়িতে যান না। যাদের কাছে চাইলে পাওয়া যায় এমন বাড়িতেই যান। সকাল থেকে ভিক্ষা করে বড়জোর কেজি খানেক চাল হয়ে থাকতে পারে। এগুলোতেই সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফেরেন। যার বাড়িতে জায়গা পান সেখানেই আশ্রয় নেন।
তিনি জানান, স্বামীর একটা বয়স্কভাতা কার্ড করা ছিল। এখন তার মৃত্যুর পর তিনি পাচ্ছেন বলেও জানান। স্বামীর বাড়ি আর নিজের বাড়ি ছিল নদীর এপার-ওপার। বাপের বাড়ি জোগাডি। সেখানেও কেউ নেই। বয়সের ভারে ভিক্ষা ছাড়া উপায় নেই। থাকেন মানুষের বারান্দায় বারান্দায়। এখানে সেখানে পড়ে থাকি। ছোট মেয়ের জামাই খোকনের চাচা আব্বাস আলির জায়গায় বর্তমানে রয়েছেন তিনি।
এমন ভূমিহীন হয়েও সরকারের দেয়া একটি ঘর পেতে অনেক জায়গায় গিয়েছেন; কিন্তু পাননি।
এদিকে ভূমিহীনদের জন্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়েও অনেকে অন্যজনকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার অনেকে নিজের বাড়ি রেখেও ঘর পেয়েছেন। জেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণগুলো থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সদরের কান্দুলিয়া এলাকার ১২টি ঘরের মধ্যে বসবাস করছে ৫ থেকে ৭টি পরিবার।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, অনেকে নিজ ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। চল্লিশা এলাকায় একই অবস্থা। প্রশাসন যাচ্ছে এমন খবর পেলেই তারা ঘরে গিয়ে দুয়ার খুলে বসে থাকেন। আবার চলে যেতেই তারাও তালাবদ্ধ করে চলে যান।
এ বিষয়ে মৌগাতি ইউনিয়নের সদস্য আবদুল কুদ্দুস জানান, বৃদ্ধা জয়বানু ভূমিহীন। তাকে সরকারের উপহারের একটি ঘর পাইয়ে দিতে চেষ্টা করেছি; কিন্তু পারিনি।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, খবরটি পেয়েছি; এ ব্যাপারে খোজখবর নেয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া ইতিমধ্যে এসব নিয়ে তিনি প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের ডেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার যেন প্রকৃত ভূমিহীনরা পান সেই বিষয়টি মাথায় রেখে যেখানে যেখানে এমন ঘটেছে তার সমাধান করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য এবং ঘর পাননি; আর যারা পেয়েছেন থাকছেন না। তাদের আইডিন্টিফাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।