নিউজ ডেস্ক :
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরী, তার স্বামী কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হকসহ আটজনকে এগার বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে একটি আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এই রায় ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু এই রায়কে যুগান্তকারী হিসেবে বর্ণনা করে জানিয়েছেন যে তারা রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। "কারণ, মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলেছেন, ভুয়া সনদ তৈরি করে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য ছিল"।
তবে আসামীপক্ষের আইনজীবী প্রণব কান্তি ভৌমিক বলেছেন, "আজ যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ রায়। যে ধারায় সাজা দেয়া হয়েছে, এই ধারায় কোন ক্রমেই সাজা দেয়ার মতো গ্রাউন্ড ছিল না"।
জালিয়াতির অভিযোগ ওঠা জেকেজি'র চেয়ারম্যান সাবরিনা গ্রেফতার
সরকারি কাজ পাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব কতটা
সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন জেকেজির সমন্বয়ক আবু সাঈদ চৌধুরী, আরিফুল হকের বোন জেবুন্নেসা রীমা, সাবেক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারী, জেকেজির কর্মচারী বিপ্লব দাস ও শফিকুল ইসলাম।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যে সময়ের জন্য আসামীদের কারাদণ্ড হয়েছে, সেই সাজা থেকে সেই দুই বছর বাদ হবে, কারণ তারা এর মধ্যে দুই বছর কারাগারে কাটিয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর এই ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩শে জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়েছে, এমন অভিযোগে কামাল হোসেন নামের একজন ব্যক্তি তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে এই জালিয়াতি ঘটনা প্রকাশ হলে সারা দেশে আলোড়ন তৈরি হয়।
জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং আরেকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে যখন পরীক্ষার ভূয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ ওঠে, তখন সরকারি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কতটা বিবেচনায় আসে- সেই প্রশ্নও উঠে আসে।
এর প্রায় একমাস পরে ১২ই জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ও জেকেজি চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
সেই বছর ২০শে অগাস্ট অভিযোগ গঠন করে আদালত। এই মামলায় মোট ২৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে যে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের কথা থাকলেও বুকিং বিডি এবং হেলথ কেয়ার নামের দুটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টাকা নেয়া হচ্ছে।
পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
থানায় কামাল হোসেন মামলা করার পর জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজিলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কম্পিউটারে ৪৩ জনের নামে তৈরি করা ভুয়া করোনা সনদ পাওয়া যায় বলে আদালতে জানানো হয়।