শাকিল আহমেদ,নড়াইলঃ
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকান ও মন্দির পরিদর্শন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
শনিবার দুপুর ১২ টায় সাহাপাড়ার রাধা গোবিন্দ মন্দিরে উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তদন্ত দলের প্রধান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা এমপি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলন্দু দাস অপু, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার ক্ন্ডুু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপূন রায় চৌধুরী, ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাডঃ ফাহিমা নাসরিন মুন্নি।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে তদন্ত দলের প্রধান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপদ নয়। সরকার ও প্রশাসন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সরকারের আমলে দেশে একের পর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর হামলা হচ্ছে, যার একটিরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি।
উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মোতাবেক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হামলার বিষয়টি তদন্ত করতে এখানে এসেছেন। আমরা এ ধরনের হামলার নিন্দা জানাই এবং ঘটনার সাথে প্রকৃত জড়িতদের বিচারের দাবী জানাই।
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা এমপি বলেন, দিঘলিয়ায় হিন্দুদের বসতবাড়ি, দোকান ও মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রামু, কুমিল্লা,পাবনা, নাসিরনগরে আগেও ঘটেছে। যদি একটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হতো, তাহলে নড়াইলে এ হামলা হতো না। এই সরকার মনে করে যদি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এ দেশে থাকে তাহলে তাদের ভোট পাওয়া যাবে, আর যদি ভয়ে তারা দেশ ত্যাগ করে তাহলে তাদের জমি দখল করা যাবে। পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করার চেষ্টা করা হয়। যারা নিরপরাধ মানুষ তাদেরকে মামলায় ফাঁসানো হয়, আর যারা প্রকৃত আসামী তারা পার পেয়ে যায়। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা বিএপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সহ সভাপতি জুলফিকার আলী মন্ডল, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আলী হাসান, লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জিএম নজরুল ইসলাম, সদস্য সচিব কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম, প্রমুখ।
সভা শেষে ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির সংস্কার ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়ার অভিযোগে স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ লোকজন সাহাপাড়ার বাড়ি ,দিঘলিয়া বাজারের দোকান ও চারটি পূজামন্ডপ ভাংচুর করে এবং একটি বাড়ি ও একটি মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফেসবুকে মহানবী (সাঃ)কে নিয়ে পোস্ট দিয়ে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়া এবং এর জের ধরে হিন্দুদের বাড়ি ও দোকান ভাংচুর এবং একটি বাড়ি ও মন্দিরে আগুন দেয়ার অভিযোগে লোহাগড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত মোট ১০ জনকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লোহাগড়া থানার এস আই মিজানুর রহমান।
Leave a Reply