নিউজ ডেস্ক :
পাবনায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়েও খুশি কৃষকও। তবে পানির অভাবে পাট পচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। জেলার ৯ উপজেলায় একই চিত্র। কোন কোন উপজেলায় নদী পাড়ের কৃষক পাট জাগ দিলেও যাদের খাল বিলের পানিই একমাত্র ভরসা তারা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
এরই মধ্যে অনেকেই আগাম পাট জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো শুরু হয়ে গেছে।
এদিকে নতুন পাট হাটে উঠতে শুরু করেছে। তবে বেশীর ভাগ কৃষকই এখন পর্যন্ত পাট জাগ দিতে দুর দুরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রকার পরিবহনে করে নদীতে পাট জাগ দিচ্ছে। এতে খরচ বেশী হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন না কৃষক। যদিও এ বছর পাটের দাম ভাল। তাছাড়া পানি কম থাকায় পানি পচে যাওয়ায় পাট কালো হয়ে যাচ্ছে। এতে দামও কম পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললেও উপজেলায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। আর সে কারণে উপজেলার অধিকাংশ খাল, বিল, ডোবা এবং জলাশয়ে তেমন কোন পানি নেই।
যেটুকু পানি আছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে পাট চাষিরা বৃষ্টির আশায় পাট কেটে কেউবা জমির পাশে, কেউবা রাস্তার পাশে, আবার কেউবা খাল, বিল বা ডোবার পাশে স্তুপ করে রেখে দিয়েছেন।
এদের মধ্যে অনেকে আবার খাল, বিল বা জলাশয়ের অল্প পানিতেই পাট পচানোর চেষ্টা করছেন। আবার কেউ পরিবহনে করে দুর দরান্ত থেকে পাট বহন করে নিয়ে এসে ইছামতি নদীতে জাগ দিচ্ছে।
পাবনা সদর, সাঁথিয়া সুজানগর, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, ভাংগুড়া ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পাট চাষিদের এমন দুর্দশা দেখা গেছে। অনাবৃষ্টির কারণে জমির কাছাকাছি জলায়শয়ের পানিও শুকিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচন্ড তাপে কোথাও কোথাও পাটগাছ পুড়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাশে পাট রেখে দিলেও পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার ৯ উপজেলার ৪০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাটের এই দর গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর একই সময়ে ভালোমানের পাট মণ প্রতি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
পাবনার সদর উপজেলার কামারডাঙ্গা গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল বলেন, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশি করে পাট রোপণ করেছি। গত বছর ৭ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করলেও এবার ১১ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারব না বলে জমিতেই রয়েছে।
অনেক জমির পাট মরে যাচ্ছে। ভরা মৌসুমে পানির দেখা নেই। বৃষ্টিও হচ্ছে না। পাট নিয়ে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে আছি। এ জন্য বাজারে দাম বেশী পেলেও লাভের মুখ দেখছি না।
সুজানগরের পাট কেটে পালা করে রাখা আবু সাঈদ বলেন, ১০ কিলোমিটার দূরে দুর্গাপুর থেকে ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে ৩০০ টাকা প্রতি গাড়ি হিসেবে পদ্মাপাড়ে নিয়ে আসছেন। জাগ দিতে পুকুর মালিককে ১ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, পাট জাগ দিতে যাতে কৃষকদের সমস্যা হওয়ায় ইতোমধ্যে সেচ প্রকল্পের ক্যানেলগুলোতে পানি সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ¯সুইস গেট খুলে বিলে পানি ঢোকানোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকদের কষ্ট দূর হবে। আগামী বছর কৃষকরা যেন বিড়ম্বনার শিকার না হোন সেটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে