মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি।
চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার আলিনগর ও জঙ্গল সলীমপু র ছিন্নমূলবাসীদের আকষ্মিক উচ্ছেদে একমাত্র বসতভিটা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব দিশেহারা। উচ্ছেদ অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ চোখের পলকে শতশত স্থাপনা ধ্বংস যা কোন মতেই মানতে রাজি নন।উচ্ছেদ অভিযানকে নানা অনিয়মের অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ।
আজ বুধবার (৩আগস্ট) বিকেলে উচ্ছেদের প্রতিবাদে এলাকার বসবাসকারী সর্বস্তরের জনগণের স্বতফুর্ত উপস্থিতিে মানবঢাল, তীব্রনিন্দা,সড়ক অবরোধ করে।সেইসাথে জরুরি বিদ্যুৎ সংযোগ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনে দাবিতে সরকারের কাছে দাবি জানায়।
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আমরা ভুমিহীন অসহায়। আমাদের বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন,দীর্ঘ ৩০/২৫ বছরের স্থাপনা যা চরম বিষাদ ভোগান্তি অপূরনীয় ক্ষতি,চরম অমামবিক।
জঙ্গল সলীমপুর ও আলীনগরে অভিযান চালিয়ে ১৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। এর প্রতিবাদে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডসহ আলিনগরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন অত্র এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণ সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (২আগস্ট) বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে বিকাল ৫টা থেকে দু’ঘণ্টার অবরোধে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
একপর্যায়ে ওই এলাকায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান ও উচ্ছেদ বন্ধের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা। সেইসাথে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ ও পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি জোর জানাই। অন্যথায় আমরা আবারও আরও তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন প্রয়োজনে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।
স্থানীয়রা জানায়,বিনা নোটিশে আমাদের এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জনজীবন ব্যাহত করছে প্রশাসন। বেশিরভাগ এলাকায় পানি সরবরাহও বন্ধ রাখা হয়। ফলে আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। এর মধ্যে আজ আবার ১৭৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন তারা। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করা ও পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা আবারও মহাসড়ক অবরোধ করব।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন- উচ্ছেদ অভিযানে ১৭৫ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৭০০একর পাহাড়ি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। জঙ্গল সলিমপুর,আলী নগর নিয়ে বহু আগেই থেকেই সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় এ কার্যক্রম। এবং সেখানে বসবাসরত ভূমিদস্যুদের হাত থেকে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার পূর্ব পরিকল্পিত মাষ্টার প্লেন।এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের গৃহায়ন প্রকল্পের আওতায় পূনর্বাসন করা হবে।
সরকারি সম্পদ উদ্ধার,নতুন করে পাহাড় না কাটা ও অবৈধ ভূমি দখল যাতে না হয় সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জঙ্গল সলিমপুরে সরকারের গৃহীত মহাপরিকল্পনার বিষয়ে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের আওতায় বিভাগীয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা অফিস,চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার,স্পোর্টস ভিলেজ,সাফারি ও ইকোপার্ক,র্যাব ও পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পের প্রস্তাবিত স্থাপনার সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সরকারের গৃহীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বাইরে আশপাশের পাহাড়ের পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখা হবে।এছাড়াও পাহাড়ের পরিবেশ ও প্রতিবেশ অক্ষুন্ন রেখে চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি সুন্দর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উচ্ছেদের সময় আলীনগরে সরকারি জমিতে ইয়াসিনের নির্মিত অফিস,ঘর এবং তার বিশেষ টর্চার সেল গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.শাহাদাত হোসেন বলেন,আলীনগরের বাসিন্দারা আগেও অভিযানের কথা শুনলে সড়ক অবরোধসহ নানাভাবে অভিযান ব্যাহত করত। এবারও তারা একই আচরণ করছে। তারা সড়ক অবরোধ করে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগসহ অভিযান বন্ধের বিভিন্ন দাবি জানান। এ সময় সড়কে যানজট তৈরি হয়। পরবর্তীতে দু’ঘণ্টা পর তারা চলে যান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুনঅভিযানে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ডের ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম, অফিসার্স ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদসহ ৭০ জন পুলিশ, ৪০ জন র্যাব ও ৬০ জন আনসার সদস্য প্রমুখ।