লক্ষীপুর থেকে খোরশেদ আলম রনি
দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালানোর জন্য নিয়োগ পেয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মরিয়ম আফিজা। তিনি লক্ষ্মীপুরের মেয়ে। ২০২১ সালের ২ নভেম্বর নিয়োগ পান তিনি।
মরিয়ম আফিজা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। আফিজার এমন সাফল্যে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, দেশের প্রথম মেট্রোরেল আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে। সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেলের প্রতিটি কোচ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি)। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার যুগে প্রবেশ করবে। দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এর মধ্যেই ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দূরত্ব ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এই পথে ১৬টি স্টেশন রয়েছে।
মরিয়ম আফিজা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঢাকায় ফিরে আরও চার মাস প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে কারিগরি ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এখানে মেট্রোরেলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মিতসুবিশি-কাওয়াসাকি কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা ট্রেন পরিচালনার কারিগরি ও প্রায়োগিক নানা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এরপর তিনি দিল্লি মেট্রোরেল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রয়োজনে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের জাপানেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের।
মেট্রোরেলের প্রথম নারী চালক হতে পেরে উচ্ছ্বসিত লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মরিয়ম আফিজা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের নভেম্বরে আমি নিয়োগ পেয়েছি। তারপর থেকে স্বপ্ন বুনছি সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। মেট্রোরেল বাংলাদেশে প্রথম। তাই আগ্রহ থেকেই এই চাকরির আবেদন করেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য মেট্রোরেল যেমন স্বপ্নের মতো, ঠিক তেমনি মেট্রোরেল আমার কাছেও একটা স্বপ্ন। আমি নিজে ট্রেন চালাব—এটা ভেবে এখনই বেশ আনন্দ লাগছে। এখন মূল লক্ষ্য সঠিকভাবে সব প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা। দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ নিচ্ছি এবং শিখছি।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনায় যোগ্য ও দক্ষ লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নারীরাও যাতে বেশি সংখ্যায় নিয়োগ পান, সে বিষয়টিতেও নজর দেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালুর লক্ষ্য নিয়ে পুরোদমে কাজ চলছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিস্ময় প্রকল্প মেট্রোরেল। তিনি সব সময় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। তার অংশ হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থী নারী চালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। মরিয়ম আফিজার এমন সাফল্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আনন্দিত।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী ভালো অবস্থানে গেলে আমাদের ভালো লাগে। নারী হিসেবে আফিজা সাহসী। আমি তার সর্বাঙ্গীন উন্নতি কামনা করছি।
প্রসঙ্গত, মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের আগস্টে। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুন পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
শুরুতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল (লাইন-৬) নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আরও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। শুরুতে ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন করে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাল আরও দেড় বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালুর পরিকল্পনা আছে। এই পথে ৯টি স্টেশন আছে। আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে ট্রেন চালু হতে পারে আগামী বছর ডিসেম্বরে। এই পথে স্টেশনের সংখ্যা ৭। আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের স্টেশন নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ সেট (এক সেটে ছয়টি কোচ) মেট্রোরেল ঢাকায় আছে। এগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে।