নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইলে দুই সন্তানের জননী সাথী খাতুনকে হত্যার অভিযোগ ভাশুর হুমায়ুনের
বিরুদ্ধে। সাথী খাতুন নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর গ্রামের মোঃ মোসারেফ হোসেনের
মেয়ে।এই বিষয়ে
নিহত সাথী খাতুনের ভাই মোঃ জাকির হোসেন লোহাগড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। জাকির হোসেন জানান, ১৪ বছর পূর্বে লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের
কালাচাঁদপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের ছেলে মোঃ এনামুল বিশ্বাসের
সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সাথি খাতুনের । বিয়ের পর আমার বোন তার স্বামীর বাড়িতে
অবস্থান করে সংসার করছিল। আমার ভগ্নিপতি এনামুল বিশ্বাস কুয়েতে চাকুরী
করেন। আমার বোনের সুমাইয়া জেরিন(১১) ও তাসমিয়া (৪)নামে দুটি কন্যা সন্তান
আছে। আমার ভগ্নিপতি মাঝে মাঝে দেশে আসতো, ছুটি শেষ হলে আবার চলে যেত।
আমার ভগ্নিপতির অনুপস্থিতির সুযোগে আমার ভগ্নিপতির বড় ভাই হুমায়ুন খুটি নাটি বিষয় নিয়ে প্রায়ই আমার বোনকে নির্যাতন করতো,এধরনের একাধিক অভিযোগ আমার বোন এর পূর্বে আমাদের জানিয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ১০ই আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে আমার বোন অসুস্থ বলে আমাকে তার শশুর বাড়ি থেকে জানানো হয়, এর কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন দিয়ে আমার বোনের মৃত্যুর সংবাদ জানায়, আমরা গিয়ে দেখি আমার বোন সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে, এটা আত্নহত্যা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যা কান্ড, আমার বোনকে মেরে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে
আমাদের ফোনে খবর দিয়েছে তারা। আমি এই বিষয় নিয়ে লোহাগড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছি, লাশ ময়নাতদন্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। আমি আমার বোন হত্যার বিচার চাই।
নিহত সাথী খাতুনের চাচাতো ভাই সিফাত মোল্যা জানান, আমরা আপুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই, সেখানে গিয়ে লাশের পাশে ঐ বাড়ির কাউকে আমরা পাইনি, লাশের হাতে, কোমরে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল, আপার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও পাওয়া যায়নি, এটা পরিকল্পিত হত্যা কান্ড, আমরা তদন্ত সাপেক্ষে এর বিচার চাই।
নিহত সাথি খাতুনের আরেক চাচাতো ভাই রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, হুমায়ুন মাঝে একদিন ফোন দিয়ে আমাকে বলে আপনার বোনের মাথায় বাড়ি মেড়ে দুই ভাগ করে ফেলবো,
আমি তাকে অনুরোধ করি বোনের সাথে খারাপ আচরন না করার জন্য, তার কোন ভূল থাকলে বুঝিয়ে শুনিয়ে নেন, গত কালকে ফোন দিয়ে আমার বোনের ভাশুর হুমায়ুন আমাকে বলে, আপনার বোনের দূর্ঘটনা ঘটেছে,এর পরে জানায় দূর্ঘটনায় সে মারা গেছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে বোনের লাশ নিচে নামানো দেখতে পাই, আমি হুমায়ুনের খোজ করলে তার বাড়ির লোকজন বলে নিহত সাথির বড় মেয়েকে নিয়ে হুমায়ুন পাঁচদিন আগে নরসিংদী গেছে,কিন্তু বাজারে গিয়ে জানতে পারি হুমায়ুন গত কালকেও বাজারে এসে চা খেয়ে গেছে,স্থানীয় এলাকাবাসীদের কাছ থেকে আরো জানতে পারি, গতকাল ১০ই আগষ্ট সাথীর সাথে তার শশুর বাড়ির লোকজনের বাগ বিতন্ডা হয়, এক পর্যায়ে সাথি বোরকা পরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলে তার শশুর বাড়ির লোকজন তাকে রাস্তা থেকে জোড় করে ধরে নিয়ে যায়, এর কিছুক্ষণ পর সে গলায় দড়ি নিয়ে আত্নহত্যা করেছে বলে চেঁচামেচি করে স্থানীয় লোকজন জড় করে সাথীর শশুর বাড়ির লোকেরা। এটা আত্নহত্যা নয় এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড,এ হত্যাকান্ডে সাথির ভাশুর হুমায়ুন সহ পরিবারের সবাই জড়িত, আমি এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের বিচার চাই,
সাথির চাচাতো বোন জানান, আমি সাথির হাতে, পায়ে ও কোমরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হুমায়ুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঘটনার দিন বাড়িতে ছিলাম না, আমাকে শুধু শুধু জড়ানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু হেনা মিলন বলেন আমরা খবর
পেয়ে লাশ ময়না তদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে প্রেরন করেছি। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।এ বিষয়ে লিখিত
অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাকিল আহমেদ
নড়াইল প্রতিনিধি