নিউজ ডেস্ক :
পঞ্চগড়ে লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতিবেশির ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। দুই বছর পর সভাপতির মেয়াদ শেষ হলে চাকরি না দিয়ে উল্টো টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেছেন। এক পর্যায়ে ছেলের চাকরির জন্য ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে লাঞ্চনার শিকার হয়ে অপমান সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ভুক্তভোগী এক বাবা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে অপারেশন শেষে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
পরে মরদেহ নিয়ে নিজের বাড়িতে না গিয়ে প্রতারকের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে অনশন শুরু করেছেন মৃতের স্বজন ও গ্রামবাসীরা। ঘটনাটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধানপাড়া গ্রামের প্রতারক জুলফিকার আলী প্রধানের বাড়িতে। এদিকে মরদেহ বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারক জুলফিকার আলম ও তার পরিবার পালিয়ে যায়। মৃত ভুক্তভোগী হলেন প্রধানপাড়া গ্রামের মৃত নজমল হকের ছেলে দবিরুল ইসলাম।
স্থানীয় এবং মৃত দবিরুলের পরিবার জানান, প্রধানপাড়া দারুল ফালাহ দাখিল মাদরাসায় লাইব্রেরিয়ান পদে দবিরুল তার ছেলে জাকিরুল ইসলামের চাকরির জন্য দুই বছর আগে মাদরাসার তৎকালীন সভাপতি জুলফিকার আলম প্রধানকে চাহিদা অনুযায়ী ১২ লাখ টাকা দেন। কিন্তু দুই বছর পার করে মাসখানেক আগে দবিরুলকে সাফ জানিয়ে দেন তার ছেলে জাকিরুলকে চাকরি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন প্রতারক জুলফিকার আলম। এক পর্যায়ে গত ১৫ দিন পূর্বে আবারও টাকা ফেরত চায় দবিরুল, কিন্তু টাকা না পেয়ে দবিরুল উল্টো জুলফিকার আলম ও তার পরিবারের কাছে লাঞ্চনার শিকার হয়। অপমান সইতে না পেরে দবিরুল হার্ট স্ট্রোক করেন। চিকিৎসার জন্য বিশ হাজার টাকা হলেও ফেরত চাওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে মারা যান।
স্বজনদের দাবি- টাকার চিন্তায় স্ট্রোক করেছেন দবিরুল। কারণ কয়েক দফায় দবিরুলের ট্রাক্টর, চার বিঘা জমি, নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল এবং দুটি মাইক্রোবাস বিক্রি করে ছেলের চাকরির জন্য টাকা সংগ্রহ করে প্রতারক জুলফিকার আলমের হাতে তুলে দেন তিনি।
মৃত দবিরুলের বড় ভাই বদিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাতিজাকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ১২ লাখ টাকা দাবি করে জুলফিকার। আমার বড় ভাই জমি এবং মোটরসাইকেল গাড়ি ও গরু বিক্রি করে তাকে ১২ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু জুলফিকার চাকরি না দিয়ে প্রতারণা করেছে। টাকা ফেরত চাওয়ায় আমার বড় ভাইকে লাঞ্ছিতও করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি সুরাহা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত মরদেহ নিয়ে অনশন চালিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেন তারা।
তিনি আরও বলেন, প্রথমবার স্ট্রোক করার পর চিকিৎসার জন্য মাত্র ৫ হাজার টাকা চাইতে গেলে জুলফিকার এবং তার পরিবারের লোকজন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয় আমার বড় ভাইকে। এই অপমান সইতে না পেরে আমার ভাই আবারও স্ট্রোক করেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত মরদেহ দাফন হবে না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জুলফিকার আলম প্রধানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
মৃতের ছেলে আবদুস সবুর প্রধান জানিয়েছেন, টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আমরা বেশ কয়েকবার গ্রাম্য শালিশ করেছি। ইউপি চেয়ারম্যানের ডাকেও সাড়া দেননি জুলফিকার আলম। সর্বশেষ পঞ্চগড় পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু দেন দরবার করেও ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। এজন্যই আমার বাবা স্ট্রোক করেছেন। জুলফিকার আলমের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।
সাতমেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি বলেন, এমন একটি ঘটনা লোকমুখে শুনেছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করবো।