নিউজ ডেস্কঃ
সারাদেশে জুনিয়র, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান সম্ভবত ৯৫%। এখানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের সংখ্যাও অনেক। শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতি মাসের বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে বন্টন করে থাকে।
এই বেতন ভাতাদি পাওয়ার জন্য কিছু প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বেতন ভাতাদি প্রদানের অর্থ ছাড়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করে তারপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জিও জারি করে। জিও প্রাপ্তির পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি চেক ও এমপিও টাকার হিসাব বন্টনকারী ব্যাংক সমূহের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করে। ব্যাংক সমূহের প্রধান কার্যালয় উক্ত এমপিও টাকার হিসাব তাদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রেরণ করে। তারপর আঞ্চলিক কার্যালয় সংশ্লিষ্ট শাখা সমূহে প্রেরণ করে। স্থানীয়ভাবে বণ্টনকারী ব্যাংকের শাখা সমূহ এডভাইস পাওয়ায় পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্টন করে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ ইএমআইএস সেল থেকে অনলাইনে আপলোডকৃত এমপিও শীট ডাউনলোড করে বিল তৈরী করে ব্যাংকে জমা দিতে হয়। ব্যাংক প্রতিদিন সাধারণত ১০ টি প্রতিষ্ঠান করে বেতন ভাতাদি বিতরণ করে।
এর মধ্যে ঘটে যাওয়া নানান প্রক্রিয়া ও ঘটনা শিক্ষক কর্মচারীরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের বেতন ভাতাদি যথাসময়ে উত্তোলন করতে পারে না।
বেতন ভাতাদি প্রাপ্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো একটি ক্ষেত্রে সমস্যা হলেতো কথাই নাই।
এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরের মাসের শেষের দিকে হয়ে যায়। ২০০৯ এর পূর্বে ১-২ মাস পরে বেতন পেত শিক্ষকরা। দেশের বিভিন্ন পত্রিকা শিক্ষকদের কষ্টের কথা চিন্তা করে এ বিষয়ে নানান লেখনি দ্বারা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আজকের বেতন ভাতাদি পাওয়ার পরিবর্তনের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তারপরও শিক্ষকরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে বিজ্ঞপ্তির দিকে তাকিয়ে থাকে কখন বেতন ছাড় হবে কখন বেতন তুলতে পারবো।
দেশের সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বেতন প্রদানের খবর কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশ হয়না। কারণ তারা সঠিক সময়ে বেতন পান এবং বর্তমানে সরকারি অনেকই বেতন ইএফটির মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি প্রদানের খবর পত্রিকায় আসে। বেতনের খবর জানার জন্য পত্রিকার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। মাসের শেষ বা প্রথম দিকে পত্রিকা আসলেই প্রথমে শিক্ষকরা খোঁজেন বেতন ছাড় হলো কিনা।
সরকারি অনেক আর্থিক সুবিধা স্বচ্ছতার জায়গায় নিয়ে আসার জন্য পিটুপি এবং ইএফটি ব্যবস্থা সর্ব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করছেন।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশেকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তর করেছে। তার মধ্যে লেনদেন ব্যবস্থাকে করেছে আরো ডিজিটাল। মানুষ এখন ঘরে বসেই সকল ধরনের লেনদেন অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করতে পারে। কিন্ত এ আইসিটির যুগে বিশাল সংখ্যক বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন কেন এনালগ পদ্ধতিতে পাবে? যে শিক্ষকরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করছে। তাহলে সে শিক্ষকরা কেন এই ডিজিটাল সুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়বে? তবে বলা বাহুল্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে নানান ক্ষেত্র ডিজিটালাইজেশন করেছে যা প্রশংসনীয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি বিতরণ থেকে গ্রহণের জটিলতা ও ডিজিটাল করা ও সকল সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি আধুনিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ইএফটির মাধ্যমে প্রদান করার পরিকল্পনা গ্রহণ। সে অনুযায়ী শিক্ষক কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ইএমআইএস সেলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। এরপর চলে গেলো কয়েক মাস এখনো এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা ভাগ্যে এলো না ইএফটি এর আলোর মূখ।
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় ইএফটির জন্য শিক্ষক কর্মচারীদের এনআইডি কার্ডের সাথে এমপিও শীট ও সার্টিফিকেটের তথ্য মিল থাকতে হবে। আর এ তথ্যগত অমিল অনেকেরই রয়েছে। সেজন্য ইএফটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা যেভাবে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করেন সেখানে তাহলেতো অনেকেরই তথ্যগত ভুল রয়েছে। তারপরও তারা বেতন ভাতাদি গ্রহণ করতে পারছেন, কোন সমস্যা ছাড়াই। তাহলে বর্তমানে শিক্ষক কর্মচারীদের যে তথ্য আছে সে অনুযায়ী শিক্ষক কর্মচারীরা যে ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করেন সে একাউন্টে কি ইএফটির মাধ্যমে টাকা পাঠানো যায় না?
ইএফটিতে এনআইডির তথ্য যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ তাই এনআইডি দিয়ে সকল শিক্ষক কর্মচারী নিশ্চয়ই ব্যাংক একাউন্ট খুলেছেন সে এনআইডির আলোকে কী সে একাউন্টে ইএফটি প্রদান করা যায় না?
শিক্ষক কর্মচারীরা এমপিও কপির নাম, অনলাইন ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকে এনআইডির তথ্য হালনাগাদ করে নিলে কি হয় না?
কিন্তু এতো মাসেও উক্ত বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাবেক একজন সচিব খুব ভালো কতগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন কিন্তু তিনি যাওয়ার পর সেগুলো কিছুটা স্থবির হয়ে গেছে। এরপর গত কয়েক মাস পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ইএফটির মাধ্যমে প্রদান করার জন্য নিরলস কাজ করেছেন তিনিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হওয়ার পর এটি কিছুটা যেন স্থবির হয়ে গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ও সুযোগ প্রদান করেছেন। করোনাকালীন সময়ে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা, এনটিআরসিএর মাধমে বিশাল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ, ননএমপিও শিক্ষকদের প্রণোদনা ইত্যাদি। এমপিও নীতিমালা ২০২১ এ ইএফটি বিষয়টি সংযুক্ত করে মন্ত্রণালয় একটি আধুনিক ব্যবস্থার দ্বার খুলে দিয়েছে। এখন বাস্তবায়নের প্রহর গুনছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা।
ইএফটি শিক্ষকদের একটি প্রাণের দাবি তাই সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা উক্ত সুবিধার আওতায় দ্রুত সময়ে আসবে মন্ত্রণালয়ের কাছে এ প্রত্যাশা সকলের।