রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাট জেলা সদরের দেউতিরহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ২ ছেলেকে রক্ষা করতে স্বাক্ষর জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ হাকিমের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতিরহাট বাজার সংলগ্ন দেউতিরহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম তার বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী সুলতান মন্ডল ও নিরাপত্তা প্রহরী শাহজাহান মন্ডল ফৌজদারি মামলায় পলাতক থাকায় বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন।
গত ১২ আগস্ট ৪ সাংবাদিক-কে মারধোরের ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজার মন্ডল ও তার ছেলে একই বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী সুলতান মন্ডল, নিরাপত্তা প্রহরী শাহজাহান মন্ডলসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ২০/২১ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়েরের পর থেকে সভাপতি ও তার ছেলেরা পলাতক থাকায় প্রভুভক্তি দেখিয়ে নৈশপ্রহরী সুলতান মন্ডলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম।
বিষয়টি জানতে সাংবাদিকরা সরেজমিন গেলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ হাকিম জানান, সভাপতির দুই ছেলে সুলতান মন্ডল ও শাহজাহান মন্ডল ছুটিতে রয়েছেন কিন্তু সাংবাদিকরা ছুটির আবেদন দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষক অন্তত দুই ঘন্টা টালবাহানা করে তা দেখাতে ব্যর্থ হন। হাজিরা খাতায় দেখা যায়, ১৪ আগস্ট সুলতানের স্বাক্ষরের জায়গায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা পুর্বের স্বাক্ষরের সাথে একেবারে অমিল। আর স্বাক্ষরটি যে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম প্রভুভক্তি দেখিয়ে নিজে করেছেন তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক নিশ্চিত করেছেন। এর আগের তারিখ ১৩ আগস্ট সুলতান মন্ডলের স্বাক্ষরের জায়গায় ফ্লুইড দিয়ে ঘশামাঝা তার উপরে লাল কালী দিয়ে (লিভ) লেখা হয়েছে। যা তদন্ত করলে তার প্রমান পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও দেউতিরহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডলের ছেলে একই বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী সুলতান মন্ডল ঐ এলাকার দুই সন্তানের জননীকে ফুসলিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। সুলতান নিজেও দুই সন্তানের জনক। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে গত ১২ আগস্ট সাংবাদিকরা সেখানে সংবাদ সংগ্রহে যায়। সাংবাদিক আসার কথা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতি তার তিন ছেলে ও ১০/১২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সাকোরপাড় নামক স্থানে সাংবাদিকদের পথরোধ করে সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় পরে সাংবাদিকের কাছে থাকা ক্যামেরা ট্রাইপড কেড়ে নিয়ে ক্যামেরা ভাংচুর করে। পরে ওই দিন রাতেই যমুনা টিভির লালমনিরহাট প্রতিনিধি আনিছুর রহমান লাডলা বাদী হয়ে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান ও তার তিন ছেলের নাম উল্লেখসহ ২০/২১ জনকে অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে দেউতির হাট দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, হাজিরা খাতায় নৈশপ্রহরী সুলতান নিজে স্বাক্ষর করেছেন সে সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। আর এজাহার ভুক্ত পলাতক আসামি প্রতিষ্ঠানে এসে স্বাক্ষর করলেন কিন্তু আপনি প্রশাসনকে খবর দিলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমার কাজ নয়।
এদিকে সার্বিক খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয় জানলাম, আজকেই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।