মোঃ জুলহাস উদ্দিন হিরো, শেরপুর জেলা প্রতিনিধু।
শহরতলী গ্রাম।
আষাঢ় মাস, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার কথা
কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না
বরং সূর্যের তাপ অসহনীয়
দুপুরের ক্লান্ত রোদের পর
পড়ন্ত বিকেলে যেন ঝিমোচ্ছে
শহরতলীর ঐ গ্রামটি
মাঝে মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসা
দুই একটা গাড়ির হর্ণ শোনে
গ্রামটি যেন চমকে চমকে উঠছে আধঘুম চোখে
সেই গ্রামের মেঠোপথে হাটতে থাকলে
সঙ্গী হয় রাস্তার বুক চিড়ে জেগে উঠা সবুজ ঘাস
প্রশান্তি আসে ঐ খালের পাড়ে বাড়িটার পিছনে
পেতে রাখা চাঙ্গটাতে বসলে
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে আলাপ করে দক্ষিণা বাতাস
চৈত্রের ঠাঁ ঠাঁ রোদে রাস্তার পাশে
কাঠালি বটগাছটার তলায় বসে
মেপে মেপে কম হলেও
একশ একর জমির একত্রে বসবাস, তাদের সুখ, দুঃখ
যেন দৃষ্টিকে ছুঁয়ে যায়।
হেমন্তে যখন মাঠে মাঠে
ধান কাটার আমেজ শুরু হয়
তখন, এক রত্তি কলকি আইসক্রিমেও
যেন অমৃতের স্বাদ পাওয়া যায়
কাটা ধানের সুগন্ধি চাউল দিয়ে তৈরী হয় পিঠা, পায়েস
সেই উৎসবের সুর চলে যায় নতুন মেয়ে জামাই বাড়ি!
দাদি-নানিরা বলতে থাকে
সব নাতিন জামাই বাইত তেওর দেওন লাগবো!
ঘরে ঘরে যেন আনন্দের সাঁনাই বাঁজে তখন
সেই গ্রামে বড় উৎসবটি আসে পৌষ মাসে
পৌষ পার্বনে যখন দরগা তলায় মেলা বসে
আহা! কী আনন্দের সুরই না তখন ভেসে আসে
সেখানে ঘোড়া দৌড় হয়,পুতুল নাচ হয় ,গাঙ্গি খেলা হয়!
দোকানিরা সারি সারি হয়ে বসে থাকে
চুড়ি, মালা, ঝুনঝুনি, বাতাসা আরো কত্ত কি বেঁচে
বন্দের মধ্যে ছোট্ট কুঁড়েঘরের ধান কুড়ানো মেয়েটাও
প্যাঁ প্যুঁ বাঁশি বাঁজায় কত আনন্দে
রিকশা ওয়ালা ছুলুর ছোট্ট মা মরা মেয়েটা তানিয়া
সেও বেলুন হাতে নিয়ে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে
পাখির মতো উড়ে বেড়ায়
গ্রামের শেষ মাথায় থাকা বেলী পাগলী
সেও স্নো, পাউডার মেখে
ঘোড়া দৌড় আর গাঙ্গি খেলা দেখতে চলে যায়।
সেই শহরতলী ছোট্ট গ্রামটিই যেন
গভীরভাবে অনুভব করায় পুরো বাংলার ঐতিহ্যকে
সেই গ্রামে হাজারো প্রাণের উচ্ছাস নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়ায়
শহরতলী সেই গ্রামটি যেন হাসায়, কাঁদায়, শেখায়!