নিউজ ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুলকে (স.) পেতে হলে কিছু সোর্স লাগে। সব বান্দা যদি সমান হতো তাহলে তো দুনিয়া বেহেশত হয়ে যেত, কিন্তু সব বান্দা তো সমান নয়। কিছু পরশ পাথর লাগে। যে পাথরের ঘষায় আমরা নিজেদের পবিত্র করতে পারি। ইসলামকে জঙ্গিবাদ বানিয়ে দেয়া হয়, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এমনকি কোনো ধর্মেই নেই।
শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে শহরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জাকের মঞ্জিলের বিশ্ব ফাতেহা দিবস-২০২২ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের কেন্দ্রীয় মিশন সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, কোনো ধর্মই খারাপ কিছু সমর্থন করে না। ইসলাম হল শান্তির ধর্ম। আর শান্তির বিধান হল কুরআন। আমি কুরআন পড়ি রোজ দুবেলা। কুরআনে স্পষ্ট লেখা আছে, কেউ যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল, তাহলে সে সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর কেউ যদি একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করল। মানুষ বলা হয়েছে, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান বলা হয়নি। বলা হয়েছে যেই এলাকায় মুসলিম বেশি থাকবে, সেই এলাকায় যদি কোনো বিধর্মী থাকে তবে তাদের দেখে রাখতে।
তিনি আরও বলেন, বেশি কিছু লাগে না, আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর বিদায় হজের ভাষণটিই যথেষ্ট। অল্প সময়ের সেই ভাষণে সারা পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার সমাধান তিনি দিয়ে দিয়েছেন। সাদা আর কালার (বর্ণবাদ) মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, কেউ কারও ওপর প্রভুত্ব করতে পারবে না, নারী ও পুরুষে কোনো পার্থক্য নেই। নারীর পুরুষের ওপর যেমন অধিকার আছে, তেমনি পুরুষের ওপর নারীর অধিকার আছে। শ্রমিকের মাথার ঘাম পায়ে পড়ার আগেই তার মূল্য পরিশোধ করো, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে শেষ হয়ে যাবে। এ রকম বেশ কিছু পয়েন্ট তিনি উল্লেখ করেছেন।
উপস্থিত সকলের কাছে দোয়া চেয়ে শামীম ওসমান বলেন, পৃথিবীতে একটা সত্য সকলের সঙ্গেই ঘটবে, সেটা হল মৃত্যু। আপনাকে আমাকে একদিন মরতে হবে ভাই, মরতে হবেই হবে। ওই কবর খোঁড়া হবে, মাটি চাপা দেয়া হবে। সবাই বলবে দ্রুত মাটি চাপা দেন এবং খুব দ্রুত মাটি চাপা দেয়া হবে। জবাব কী দিব? আপনি যদি আপনার জবাব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তো বেশ। আমি আমার জবাব দেয়ার চেষ্টা করতেছি। আমি প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের সালাতের পর দুই রাকাত শুকরান সালাত আদায় করি, কারণ আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। জেনে না জেনে করা পাপের জন্য দুই রাকাত তওবার সালাতও আদায় করি। কেন, কারণ সকাল বেলায় ঘুম থেকে আমি নাও উঠতে পারি।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম শক্তির ধর্ম না, শান্তির ধর্ম। আমার আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সন্তুষ্ট হয়ে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করবে, গায়ের জোরে না। কিন্তু আমরা কেন যেন ধর্মকে নষ্ট করে ফেলছি। ২০০১ এর পরে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম, দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতাম। পকেটে পয়সাকড়ি নেই। তবে যাদের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম তাদের প্রতি আমার কোনো আক্ষেপ নেই। বরং তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। তাদের জন্যই আমার জীবন বদলে গেছে। একদিন গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার সাথে কথা হচ্ছিল ফোনে, অনেক উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলছিলাম। আপা আমাকে বললেন, তুমি কি হতাশ হয়ে গেছো? হতাশ হলে নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর জীবনী পড়। আল্লাহর রসুলকে যদি দুনিয়াতে এত কষ্ট করতে হয়, তুমি আর আমি কে? সেদিনের সেই কথায় জীবন বদলে গেছে।
এ সময় সকলের কাছে জোড় হাতে ক্ষমা চান শামীম ওসমান। তিনি বলেন, আমার কারণে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আজকে আছি কাল নাও বেঁচে থাকতে পারি। আমি কাল মারা গেলে হয়তো আমার ছেলে বা ভাই আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবে। তার চেয়ে নিজের মাপ নিজে চাওয়া ভালো। আমি মানুষ তাই আমার ভুল হতেই পারে। তাই আপনাদের সকলের নিকট ক্ষমা চাই। আপনারা আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দেবেন।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরিফের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের কর্মী প্রধান খন্দকার শাহ আলমের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মিশন সভায় মিশন প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরিফের খাদেম হাবিবুর রহমান সেরনিয়াবাত। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্য আব্দুল কবীর, শাহীন হাফিজ, আব্দুর রহিম খান, কাজি জামসেদ কবীর, বাকী বিল্লাহ প্রমুখ।