নড়াইল প্রতিনিধি ঃ নড়াইলের
লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের লাহুড়িয়া ডহর পাড়া গ্রামের ছালিম বিশ্বাস, তার স্ত্রী রুনা বেগম ও তার মেয়ে সানজিদা কে কুপিয়ে মারাত্নক জখম করেছে সানজিদার সাবেক স্বামী গোপালগঞ্জ জেলার ফুকড়া গ্রামের সলেমান সর্দারের ছেলে মুস্তাফিজুর সরদার।
গত ১৫ ই আগষ্ট ২০২২ ইং রাত অানুমানিক বারোটার দিকে আসামী মুস্তাফিজুর সরদার ঘরের জানালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে সানজিদা ও তার বাবা মাকে কুপিয়ে মারাত্নক জখম করে, এসময় তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন উপস্থিত হয়ে আসামী মোস্তাফিজুরকে হামলায় ব্যবহৃত একটি রামদা ও একটি ব্যগসহ আটক করে লাহুড়িয়া তদন্তকেন্দ্রে খবর দিলে পুলিশ এসে মোস্তাফিজকে গ্রেফতার করে লাহুড়িয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায়।এ বিষয়ে সানজিদার পিতা ছালিম বিশ্বাস বাদী হয়ে মোস্তাফিজুর কে আসামী করে লোহাগড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।আসামী মোস্তাফিজুরকে উক্ত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগী সানজিদার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের, তিনি এ প্রতিবেদককে জানান,
গত ১০ ই ডিসেম্বর ২০২০ ইং সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার ফুকড়া গ্রামের সলেমান সর্দারের ছেলে মুস্তাফিজুর সর্দারের সাথে পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই মুস্তাফিজুর আমার উপর যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন শুরু করে।
এক পর্যায়ে স্বামী- স্ত্রী হিসেবে আমাদের শারিরিক সম্পর্কের ভিডিও সে তার মোবাইল ফোনে জোড় পূর্বক রেকর্ড করে। আমি তাকে তার মোবাইলে ধারন করা ভিডিও ডিলিট করতে বললে সে তা ডিলিট করেনি।এই নিয়ে তার সাথে আমার বাগবিতন্ডা হয়।
আমি রাগ করে বাবার বাড়ি চলে আসি।
তখন সে আমাকে ভিডিও নেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আবার তার বাড়িতে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। দফায় দফায় শালিশ বৈঠক হয়। মান সম্মান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আবার তার বাড়িতে আমি যাই। এবার যাওয়ার পর তার অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এবার শারিরিক নির্যাতন করে সে আমার সাথে জোড় পূর্বক দৈহিক সম্পর্ক করে মোবাইল ফোনে তা রেকর্ড করে ভিডিও বানায় এবং আমাকে বলে তোর বাবার কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে আয় না হলে ভিডিও নেটে ছেড়ে দেব। আমি নিরুপায় হয়ে গত ৩রা নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে বাবার বাড়ি লাহুড়িয়ায় চলে আসি এবং বাবা মাকে সব কিছু খুলে বলি। তারা আমাকে আর মোস্তাফিজুরের কছে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে আমি না যাওয়াতে ও যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় মোস্তাফিজুর মোবাইল ফোনে আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকে ও গোপন ভিডিও নেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখায় ।
এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় গত ২০ ই মার্চ ২০২২ ইং তারিখে মোস্তাফিজুরকে আমি তালাক দেই। এতে সে আমার এবং আমার পরিবারের উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়।
গত ১৫ ই আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে রাত অনুমান বারোটার দিকে আমি টিভি দেখছিলাম, এসময় আমার বাবা মা পাশের রুমে ঘুমিয়ে ছিল, এসময় প্রচন্ড শব্দে আমাদের ঘরের জানালা ভেঙ্গে মোস্তাফিজ ঘরে ঢুকে আমার বাবা, মা ও আমাকে ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।
আমার মাথায় হাতে, বুকে কোপ লাগে, আমার বাবার মাথায় কোপ লাগে ও হাত ভেঙ্গে গেছে, মায়ের মাথায় ও কোপ লেগেছে।
আমি এবং আমার পরিবারকে হত্যার উদ্দেশ্যে মোস্তাফিজুর এই হামলা চালিয়েছে।
আমি মোস্তাফিজুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে কথা হয় সানজিদার বাবা মায়ের সাথে, তারা এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা নিরীহ মানুষ,আমরা ছেলেটিকে ভাল মনে করে তার সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম।বিয়ের পর বেড়িয়ে আসে মোস্তাফিজুরের আসল চেহারা।যৌতুকের দাবীতে আমার মেয়েকে প্রায়ই নির্যাতন করতো সে।
আমরা মোস্তাফিজুরের বাবা মা কে বলেও কোন প্রতিকার পাইনি। এত অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেও মেয়েটি সংসার করতে চেয়েছিল।
কিন্তু মোস্তাফিজের বিকৃত মানষিকতা ও যৌতুকের দাবীর কারনে আমরা তার সাথে মেয়ের বিচ্ছেদ ঘটাতে বাধ্য হই।
আর এই কারনেই গত ১৫ ই আগষ্ট ২০২২ ইং রাতে আমাদের মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে মোস্তাফিজ এই হামলা করে।স্থানীয় এলাকাবাসীরা রক্তাক্ত অবস্থায় আমাদের উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে এনে ভর্তী করে।ঘটনাস্থল থেকে আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও আমরা আতঙ্কে দিন যাপন করছি।আসামী জামিনে বেড়িয়ে এসে আবার আমাদের উপর হামলা করতে পারে। আমরা আমাদের জীবনের নিড়াপত্তা চাই। আসামী মোস্তাফিজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলার
তদন্তকারী কর্মকর্তা লাহুড়িয়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এস আই মন্জেল এ প্রতিবেদককে জানান, সংবাদ পেয়ে আমরা আসামী মোস্তাফিজকে ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগ ও রামদাসহ গ্রেফতার করে নিয়ে আসি।পরবর্তীতে আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।আসামী এখন জেল হাজতে আছে।
ঘাতক মোস্তাফিজের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা ভূক্তভোগী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর।