মাসুদ রানা,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি; উত্তরবঙ্গের অন্যতম নির্দশনের জেলা দিনাজপুর। যেসব ঐতিহ্যবাহী পুরোনো স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম খানসামা উপজেলার জমিদার বাড়ি। উপজেলার সদর থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আত্রাই নদীর তীরে আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের জয়গঞ্জ গ্রামে পুরাকীর্তি জয়গঞ্জ জমিদার বাড়ি। এখনো দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ইতিহাসখ্যাত জয়গঞ্জ জমিদার বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। কিন্তু অযত্নে জয়শঙ্কর রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়িটি এখন ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। জয়শঙ্কর জমিদারের নাম অনুসারেই খানসামা উপজেলার বর্তমান জয়গঞ্জ বাজারটি গড়ে উঠে। জয়শঙ্কর জমিদার বাড়িটি বর্তমানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় দেখা যায়,সেই সাথে জমিদার বাড়ির দেওয়ালের নকশা,ইট গুলোও কেউ কেউ নষ্ট করে দিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,জমিদার বাড়িটি বর্তমানে গরু,ছাগল এবং আবর্জনা ফেলার একটি উপযুক্ত জায়গা হিসেবে পরিণত হয়েছে। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই ভবন গুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। আনুমানিক ৮০ থেকে ১০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া এই জমিদার বাড়ির দুটি দালানের মধ্যে একটি ভেঙ্গে গেছে্ অক্ষত অপর দালানটিও নষ্টের পথে।জমিদার বাড়ির চারপাশে সরকারিভাবে গড়ে উঠেছে আদর্শগ্রাম। জমিদার বাড়ির তিনটি পুকুর থাকলেও সেগুলো আদর্শগ্রামের লোকরাই ব্যবহার করে থাকে। জমি,পুকুর ব্যবহার করলেও জমিদার বাড়িটির দিকে তেমন কারো নজর নেই।
জানা যায়, জমিদার হিসেবে তেমন একটা ভালো মানুষ ছিলেন না ! সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নিপীড়ন করেছিলেন,তাই দিনাজপুরের রাজা দেবত্তর জয়সঙ্কর জমিদারকে পরাজিত করে তাকে এখান থেকে বিতারিত করেন।
উইকিপিডিয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি তিনটি নামে পরিচিত। “খানসামা জমিদার বাড়ি”, “খানসামার জয়শঙ্করের জমিদার বাড়ি” ও “জয়গঞ্জ জমিদার বাড়ি” নামে পরিচিত। তবে এই জমিদার বাড়ি কবে নাগাদ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কে এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা তা জানা যায়নি। তবে কথিত আছে, ভারতবর্ষে যখন জমিদারি প্রথা চালু ছিল, তখন থেকেই এই এলাকায় এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা এবং কোনো জমিদারের ইতিহাসে নাম না থাকলেও শেষ জমিদারের রয়েছে। শেষ জমিদারের নাম জয়শঙ্কর। তার নামানুসারে এই গ্রামের নামকরণ করা হয় জয়গঞ্জ। যা প্রায় বিশ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে দেশ ভাগের আগেই জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর শেষ জমিদার জয়শঙ্কর প্রায় ১০০ একর জমি এবং জমিদার বাড়িটি রেখে ভারতের শিলিগুড়িতে চলে যান। জমিদার বাড়িটিতে একতলা একটি প্রাসাদ রয়েছে এবং এর মধ্যে থাকার ঘর, বসার ঘর, মালামাল রাখার ঘর ও মন্দির রয়েছে। পরবর্তীতে এসব জমির মধ্যে কিছু ব্যক্তির মালিকাধীন এবং কিছু অংশ সরকারি খাস জমিতে পরিণত হয়।
জমিদার বাড়ির অনেক কিছুই নষ্টের পাশাপাশি চুরি হয়ে গেছে। অযত্নে জয়শঙ্কর রায় চৌধুরীর জমিদার এই বাড়িটি বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন এলাকাবাসী। ইতিহাসের এসব প্রাচীন সাক্ষী আগামী প্রজম্মের কাছে তুলে ধরে বিলুপ্তীর হাত থেকে রর্ক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। গড়ে উঠতে পারে পর্যটকদের কেন্দ্রবিন্দুতে।
বার্তা প্রেরকঃ
মাসুদ রানা
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
Leave a Reply