মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি।
শাহী জামে মসজিদ,জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ও পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্পের দুরবস্থা কেন জানতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ারের সাথে মতবিনিময় করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট ২০২২ইং) সকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে মতবিনিময় করতে গিয়ে এসব ধর্মীয় প্রতিষ্টানসমূহের দুরবস্থার বিষয়ে জানতে চান সুজন।
এসময় তিনি বলেন চট্টগ্রামের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যমন্ডিত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি সাড়ে ৩শ’ বছরের পুরোনো মসজিদ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান এ মসজিদটি। জুমাসহ প্রতিদিন এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মুসল্লিরা। শুধু স্থাপত্য নিদর্শনেই নয়, শৈল্পিকদিক থেকেও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ উল্লেখযোগ্য। কালের বিবর্তনে মসজিদটির আজ জরাজীর্ণ অবস্থা। ছাদের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এতে করে যে কোন সময় নামাযরত মুসল্লিরা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তাই এ মসজিদটির আশু সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। এছাড়া জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদটিও একটি বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক মসজিদ। যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় মসজিদ হিসাবেও পরিচিত। এটি অনেকগুলি খিলানসহ চমৎকার স্থাপত্যে নির্মিত। দৃষ্টিনন্দন খিলানগুলো একেবারে জ্যামিতিক সূত্র মেনে তৈরি। পুরো অবয়বজুড়ে আছে ইসলামিক নকশার ছাপ। বর্তমানে মসজিদটির অবস্থাও করুন। রং ধুয়ে মুছে ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। মসজিদের বিশাল মাঠের একাংশ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া প্রদান করা হয়েছে। যেখানে সিমেন্ট, পাথর ও বালির ধুলা মুসল্লিসহ আশেপাশের জনসাধারণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্রমাগত বাণিজ্যিক থাবায় মুসল্লিদের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ দোকান, গ্যারেজ, নোংরা আবর্জনা, ধুলাবালিতে মুসল্লিদের নামাজসহ ধর্মীয় অনুষ্টানাদি পালন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দিনে দিনে এ মসজিদ দুটির সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি মসজিদ দুটির ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান সেই সাথে এসব ধর্মীয় উপাসনালয় ঘিরে সকল প্রকার বাণিজ্যিকরণ বন্ধের আহবান জানান। সুজন আরো বলেন পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্পটি প্রায় ৯ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। এক সময় হাজার হাজার হাজীর মিলন মেলা ছিল এই ক্যাম্পে। কিন্তু সময়ের পালাবদলে সেই হাজী ক্যাম্পটি এখন পরিত্যাক্ত। রাতে যেখানে মাদক, জুয়াসহ নানারকম অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। শহরের ভিতর এতো বিশাল খালি জায়গাটি অযতœ অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। অথচ চাইলে সেখানে একটি অত্যাধুনিক ইসলামিক সামিট সেন্টার তৈরী করা যায়। যেখানে দেশ বিদেশের আলেম ওলামাগণ জ্ঞাণগর্ভ আলোচনার মাধ্যমে ইসলামের শান্তির বাণী জনগনের কাছে উপস্থাপন করতে পারবেন। বর্তমান সরকারের সারা দেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের অংশ হিসেবে হাজী ক্যাম্পটিতেও একটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করছেন। অথচ ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন সে সুযোগ নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। সুজন চট্টগ্রামের সকল মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যগণকে উপরোক্ত বিষয়ে সম্পৃক্ত করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিকট একটি বিশদ প্রস্তাবনা উপস্থাপনের জন্য বিভাগীয় পরিচালককে অনুরোধ জানান। ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার চসিক’র সাবেক প্রশাসককে নগরবাসীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে আসায় ধন্যবাদ জানান। তিনি খোরশেদ আলম সুজন কর্তৃক উত্থাপিত সকল বিষয়ের সাথে একমত পোষন করেন। তিনি আরো বলেন উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়গুলোকে প্রস্তাবনা আকারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন বলেও নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন তিনি। এছাড়া পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্পটিকে একটি ইসলামিক সামিট সেন্টার অথবা ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জোর তৎপরতা চালাবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ,আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন,সাইদুর রহমান চৌধুরী,সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন,মনিরুল হক মুন্না প্রমূখ।