মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি।
দীর্ঘদিন যাবৎ মোবাইলে পুলিশ/র্যাব/বিজিবি/অন্যান্য সংস্থার বিভিন্ন পদবির অফিসার পরিচয় দিয়ে পর্দার আড়ালে থেকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক বেলালকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
অদ্য বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) রাত ০০.৪৫ টায় ফটিকছড়ি থানাধীন নাজিরহাট বাজার এলাকা হতে আসামী মোঃ বেলাল হোসেন(৩১) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
র্যাব সূত্রে জানা যায়,গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ০৬.০০ ঘটিকায় জনৈক মোহাম্মদ খোরশেদুল আলম এর ফোনে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমা দায়ের করার হুমকি প্রদান করতঃ তার নিকট ২০,০০০/- টাকা দাবী করে। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে উক্ত প্রতারকের দেয়া নাম্বারে ১৬ আগস্ট রাতে ২০,৪০০/- টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে উক্ত প্রতারক থানার ওসি সেজে পূনরায় তার নিকট টাকা চাইলে খোরশেদ আলম ১৭ আগস্ট সকালে ৩,০৬০/- টাকা বিকাশে প্রেরণ করে। ঐদিনই উক্ত প্রতারক সার্কেল এএসপি সেজে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে ৫০,০০০/- টাকা দাবী করলে ভিকটিম ১৭ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখ রাতে আরও ২৯,৫৮০/-টাকা বিকাশে প্রেরণ করে। এছাড়া উক্ত প্রতারক এসপি সেজে ভিকটিমের বিভিন্ন বিষয়ে খোজ খবর নেন। এভাবে উক্ত প্রতারক ভিকটিমের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে সর্বমোট ৫৩,০৪০/- টাকা হাতিয়ে নেয়। অতঃপর প্রতারক তাকে পুনরায় র্যাবের অফিসার পরিচয় দিয়ে ফোন দেয় এবং জানায় মামলাটি বর্তমানে র্যাবের নিকট এসেছে এবং সে উক্ত মামলার বিষয়ে খোজ খবরের নাম করে তার নিকট পূনরায় টাকা দাবী করে।
উল্লেখিত ঘটনার বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে ভিকটিম খোরশেদুল আলম র্যাব-৭,কে অবহিত করলে বিষয়টি অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায়। অতঃপর আভিযানিক দল গোয়েন্দা নজরধারীর মাধ্যমে আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে আটককৃত প্রতারককে জিজ্ঞাসাবাদে সে অকপটে স্বীকার করে যে, সে নিজেকে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে খোরশেদ আলম এর নিকট হতে মোট ৫৩,০৪০ টাকা আদায় করেছে।
পরবর্তীতে উক্ত প্রতারকের প্রতারণার স্বীকার ভিকটিমদের নিকট হতে জানা যায়, উক্ত প্রতারক প্রতারণার মাধ্যমে ২০২১ সালের মে মাস হতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকের কাছে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর/র্যাব বাহিনীর সদস্য হিসাবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে একটা প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে বেড়াত এবং বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। উক্ত প্রতারক স্থানীয় তথাকথিত অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন চ্যানেল হতে বিভিন্ন ক্রাইম ও মামলার খবর, জমিজমার বিবাদের খবর নিয়ে নিজেকে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে কথা বলত ও টাকা দাবী করত এবং টাকা না দিলে কিংবা দিতে দেরী করলে হুমকি ধামকি দিত।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে থানার ওসি,সেকেন্ড অফিসার,মামলার তদন্তকারী অফিসার,পুলিশ/র্যাব/পিবিআই/সিআইডির কোন অফিসারের নাম গ্রহণ করে মোবাইলে এমনভাবে কথা বলত যে মামলার ভিকটিম/বাদী/তাদের পরিবার বুঝতেই পারত না। বেলাল নিজে কোনদিন কারো সাথে দেখা করত না। টাকা নিত বিকাশে এবং বিকাশের দোকানেও যেত না। বিকাশের দোকানকে অন্য নম্বরে সেন্ড করাতে বলত। এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে সে লোকজনকে প্রতারিত করে আসছে। সে নিয়মিত প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে মোবাইলে কথা বলত এবং ফোনের অপর পাশে থাকা ভিকটিমরা তাকে উর্ধ্বতন অফিসার বলে মনে করত।
গ্রেফতারকৃত আসামী বেলাল আরো জানায় ২০২১ সালের আগে তার মুরগির ফার্ম ছিল। ২০২১ সালের মে মাসে সে সর্বপ্রথম প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিকট হতে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। সর্বপ্রথম সে তার বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনকে বিভিন্ন পুলিশ অফিসার বা র্যাবের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখাতো। তারপর ২০২১ সালের মে মাসে সে একটি মুদির দোকানে সয়াবিন তেলের ডিলার সেজে ৫০০০/- টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া সে থানার ওসি সেজে ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার এর নিকট হতে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদ প্রার্থীদের মোবাইল নাম্বর সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তাদেরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করার কথা বলে বিভিন্ন পরিমান টাকা আদায় করে। সর্বশেষ রাউজান থানায় একটি বাচ্ছা মারা যাওয়ার ঘটনায় তার পিতার নিকট পোষ্টমর্টেম এর ঝামেলা এড়ানোর কথা বলে নির্মমভাবে ৫০০০/- টাকা আদায় করেছে। উল্লেখ্য, উক্ত প্রতারক স্থানীয় তথাকথিত অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভিকটিমের মোবাইল নাম্বার ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করত এবং ভিকটিমের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকা আদায় করত। তার দেওয়া ভাষ্যমতে, গত দেড় বছরে প্রতারনাই ছিল তার একমাত্র আয়ের উৎস এবং পেশা এবং সে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে এরুপ প্রতারনা করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।