নিউজ ডেস্ক :
কোনো নিয়মনীতি না মানায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই)। অভিযোগ উঠেছে, মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন একক সিদ্ধান্তে পরিচালনা করছেন প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি আটকে রাখায় গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন কর্মরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. আমজাদ হোসেন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্পে পরিচালক থেকে শুরু করে সকল মনোনয়নে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দেয়া হয়েছে মধু প্রকল্প পরিচালকের। ফলে বাড়তি চাপে তিনি গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না। এতে সাথী ফসল প্রকল্পের গবেষণা ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (সিএসও) পদের ১৬ জন বিজ্ঞানীকে প্রাপ্য পদোন্নতি দেয়া হয়নি। ফলে তাদের পদ এখনও শূণ্য। ৩ জন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার (এসএসও) এবং দুটি প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার (পিএসও) পদ ১১ বছর ধরে খালি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি মামলার অজুহাতে প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবধরনের কার্যক্রম হুমকিতে পড়েছে। পদের জ্যেষ্ঠতা পেতে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বিজ্ঞানী আতাউর রহমান, গাজী আকরাম হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিএসআরআই-এর মহাপরিচালককে আসামি করে ২০১১ সালে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলার রায় বাস্তবায়ন না করাই পদোন্নতির জটিলতা দেখা দিয়েছে। তারপর থেকে জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ৪০ জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ ওয়ার্কশপের একটি বৈঠক শুরু হলে মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে ‘পদোন্নতি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন পদোন্নতি বঞ্চিতরা। মহাপরিচালকের নির্দেশে জুনিয়র বিজ্ঞানীরা সিনিয়র বিজ্ঞানীদের সভাস্থল ত্যাগ করতে বলেন এবং লাঞ্ছিত করেন।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞানী গাজী আকরাম বলেন, 'গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছ'।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পদোন্নতি আটকে থাকার কারণেই গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।'
রঞ্জিত চন্দ্র কবিরাজসহ আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী একই মত দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা লঙ্ঘন করে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২৬ জনের একটি চিঠি পাঠান বিএসআরআই-এর মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন। এ তালিকা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
বিএসআরআই’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কমকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, '২০১৫ সালে তার সিএসও পদে পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্তু মামলার কারণে এখনো তা হয়নি। একই অভিযোগ করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাদিরা ইসলাম।'
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘মামলার অজুহাতে বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তবে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা অস্বীকার করে মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গবেষণা কার্যক্রম যথানিয়মেই চলছে।
এরইমধ্যে ২৬ জনের তালিকা পদোন্নতির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।'