এস আর সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইট-ভাটার মধ্যে পাষবিক নির্যাতন ও শরীরের বিভিন্ন অংশে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করার ঘটনায় মামলা দায়ের করার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার লস্করহাটি এলাকার একটি ক্লাব থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের নাম মেহেদী পলাশ (২২)। তিনি লস্করহাটি গ্রামের আনসার আলীর ছেলে এবং মামলার ১ নং আসামী। মামলার দুদিন পর শনিবার দুপুরে একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হলেও অন্যরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে চরম উদ্বিগ্নে দিন পার করছে নির্যাতনের শিকার হওয়া সামিউল আলমের পরিবার।
গত (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে সামিউল আলমকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে নির্জন ইট-ভাটায় দু-দফায় নির্যাতন করা হলে পরের দিন রাতেই গোদাগাড়ী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার মা হালিমা বেগম। গত (৮ সেপ্টেম্বর) গোদাগাড়ী মডেল থানায় রাত সোয়া ৯ টার দিকে ৬ জন আসামীর নাম উল্লেখ করে মামলা রেকর্ড করে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম। তবে আসামীদের গ্রেপ্তারে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জামাল উদ্দিন বিরুদ্ধে।
মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার লস্করহাটি গ্রামের আনসার আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডার মেহেদী পলাশ (২২), মহিশালবাড়ীর আলীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার রবিউল আওয়াল, মাদক ব্যবসায়ী মুক্তি খাতুনের ছেলে শাহরিয়ার জয় (২৪) , গড়ের মাঠের মাদক সম্রাট আব্দুল মালেকের দুই ছেলে জাহিদ হোসেন (১৮) ও তারেক হাসান (২০) এবং লস্করহাটি এলাকার সাগর (২২)।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ী পৌর এলাকাতেই রয়েছে ৫-৬ টি কিশোর গ্যাং। এদের মধ্যে আব্দুল আওয়াল ও মেহেদী পলাশের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের রয়েছে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী। আওয়াল, পলাশ, মেহেদী দাপটের সাথে এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। স্থানীয়রা বলছে কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িতরা মূলত তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার সাহস পাচ্ছে। এতে করে গোদাগাড়ীতে কিশোর গ্যংরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। কিন্তু পুলিশ নিরব ভূমিকা থাকায় এরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে জানায় এলাকাবাসী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জামালের কাছে জানতে চাওয়া হয় কি ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থী সামিউল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামান্য কিছু মারধর হয়েছে তেমন জটিল কিছু নয়। অথচ নির্যাতনের শিকার হওয়া সামিউলরে পুরো শরীরে মারধরের কারণে রক্ত জমাট বাঁধা, কালশিরা পড়া, পায়ে ধারালো অন্ত্র্র দিয়ে আঘাতের ফলে গর্ত হয়ে রক্ত জমাট বাঁধা, পায়ের তালুতে কালিশিরার চিহৃ থাকা সহ নানান আলামত দেখা গেছে।
এছাড়াও সামিউলের মাথায় প্রচন্ড আঘাতের কারণে অতিরিক্ত ব্যাথা হওয়ায় ও আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসপি পরীক্ষা শুরু হবে এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছে সামিউল নিজেই। এই ঘটনায় গোদাগাড়ী ৩১ শষ্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য গোদাগাড়ী হাসপাতালের চিকিৎসকরা গত ৮ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করে সামিউলকে।
সামিউলরের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ছেলেকে যে ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এমন ঘটনা যেনো গোদাগাড়ীতে আর না ঘঠে। এমন নির্যাতন মধ্যযুগীয় কায়দায় করা হয়েছে। এই নির্যাতনের সাথে জড়িতরা সবাই এলাকার চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এরা সংঘবন্ধ হয়ে বহুদিন থেকে নানান অপকর্ম করে বেড়ায়।
এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও প্রথমে থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতো পারতো। তবে তা না করে পুলিশের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে । এই ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে পুলিশ কিছুটা তৎপর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে ।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, মামলা দায়ের হওয়ার পর আসামীদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যহত আছে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার ১ নং আসামীকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। বাকিদের ধরেতে অভিযান অব্যহত আছে। তাদের পেছনে সোর্স লাগানো হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই আসামীরা কেউ বাড়ীতে না থাকায় গ্রেপ্তার করতে কিছুটা সময় লাগছে বলে জানান।