নিউজ ডেস্ক :
মিয়ানমার সীমান্তে চলমান ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ। সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটছে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এবং মিয়ানমারের গোলা যাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে না আসে- সে বিষয়ে মিয়ানমারকে সতর্ক করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।।
রোববার তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দায়িত্বশীল শান্তিকামী রাষ্ট্র। আমরা ধৈর্যের সাথে অনেকদিন ধরে এসব সহ্য করে যাচ্ছি। আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, আপনাদের সমস্যার সমাধান করুন, যাতে আমাদের এখানে কোনো রক্তারক্তি না হয়, প্রাণ না যায়।’
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে মিয়ানমার সীমান্তে চলমান ঘটনার প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয় এবং প্রায় আধঘণ্টা কূটনৈতিক আলোচনা করা হয়। এছাড়া একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা শক্ত অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছি। চেষ্টা করছি আসিয়ান দেশের রাষ্ট্রদূতদেরও ব্রিফ করতে। যাতে আমরা তাদেরকে বলতে পারি, বারবার একই অবস্থা শুনে গিয়েও তারা (মিয়ানমার) কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এটা প্রতিবেশী হিসেবে খুব দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা ভবিষ্যতে কীভাবে মিয়ানমারকে এসব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা যায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
প্রতিবাদলিপি প্রদান ও কূটনৈতিক আলোচনাকালে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের তেমন কোনো জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব। তিনি জানান, রাষ্ট্রদূত তথ্যগুলো নেপিদোতে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে। তারা যাতে এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে।
তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমরা আগেও ওনাদের (মিয়ানমার) বলেছি, রাষ্ট্রদূত মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। উনি আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা মর্টার শেল পড়া, প্রাণহানিসহ কয়েকজন আহত হওয়ার কথা বলেছি, যা শুনে উনি অস্বীকার করেননি। কিন্তু ওনাদের বক্তব্য হলো, এগুলো আরাকান আর্মির গোলাগুলিতে হতে পারে। আমাদের বক্তব্য হলো, আপনাদের দেশের (মিয়ানমারের) অভ্যন্তর থেকে যা কিছু আসুক না কেন এটা আপনাদের দায়িত্ব। এটা আপনারা দেখবেন। আপনাদের পার থেকে যেন কিছু না আসে সেটা আপনারা নিশ্চিত করবেন। এর জন্য যা কিছু দরকার তা সে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
বাংলাদেশে নিহত হওয়ার দায় কে নেবে— এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এটা একটা দুর্ঘটনা বলা যায়। যেহেতু আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না গুলিটা কে করেছে। কারণ, গুলির গায়ে লেখা আছে মিয়ানমার আর্মি। কিন্তু মিয়ানমার বলছে এই গুলি চুরি করে আরাকান আর্মি নিয়ে গেছে এবং তারা এই গুলি করছে। যাতে করে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দূরত্বের সৃষ্টি হয়। কাজেই এরকম একটা জায়গায় কে দায়িত্ব নেবে সেটা নিরূপণ করা কঠিন কাজ।’
তিনি বলেন, ‘সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমাধান তো দেখতেছেন। সমাধান কি হচ্ছে? পাঁচ বছর ধরে জাতিসংঘসহ এমন কোনো জায়গা নেই। এমন কোনো দেশ নেই, সংস্থা নেই, যেখানে আমরা যাইনি। ধরনা দেইনি। কিন্তু সমাধান কি হয়েছে? ইউএনএইচসিআর কি পেরেছে?’
দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর ওপরে সমাধানে সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধৈর্য ধরতে হবে। আমার বিশ্বাস, যদি আমরা শক্ত থাকি এর সমাধান আসবে।’
বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘রিইনফোর্সমেন্ট যেখানে যতটুকু লাগে, যা করা লাগে করবে। যাতে সাগর দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে রোহিঙ্গা আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টডার্ড ছাড়া আর কোনো বাহিনী নেই। এখনই সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা ভাবছি না।’
উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরে রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর ফলে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মর্টার শেল এসে পড়ে। শনিবার একটি মর্টার শেল এসে বাংলাদেশে বিস্ফোরিত হলে একজন নিহত ও ৬ জন আহত হন।
মিয়ানমার সীমান্তে চলমান ঘটনায় গত এক মাসে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে কয়েক দফা তলব করে প্রতিবাদলিপি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় আজ প্রতিবেশী দেশটির রাষ্ট্রদূতকে আবারও ডেকে প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয়।