নিউজ ডেস্ক :
খুলনার মহেশ্বরপাশা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমের (৫২) সন্ধান পেয়ে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ওই নম্বরে আর ফোন দিতে নিষেধ করেন বলে জানিয়েছেন এক যুবক। তার নাম জয়নাল। নিখোঁজের প্রায় ২৮ দিন পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। জয়নাল সম্পর্কে কুদ্দুস মোল্লার ভাগিনা হন।
এ ঘটনায় ওই বাড়ি থেকে তিনজনকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী, তার ছেলে এবং কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রী।
শনিবার গভীর রাতে খুলনার দৌলতপুর থানায় ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম, রহিমা বেগম ফরিদপুরে আছেন। পরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের নির্দেশে আমাদের দক্ষ কিছু কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।’
রহিমার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছিল না জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার সকল ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রেখেছিল। তাকে আমরা কোনোভাবেই ট্র্যাক করতে পারছিলাম না। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে যে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাড়ির দুই নারীর সঙ্গে তিনি বসে গল্প করছিলেন, তবে আমাদের অফিসাররা তাকে উদ্ধারের পর কোনো কথার জবাব দেননি। সেই থেকে তিনি নির্বাক রয়েছেন।’
পুলিশের ভাষ্য, ফরিদপুরের সেই বাড়ি আটক কুদ্দুস মোল্লার, যিনি রহিমাদের খুলনার বাসায় ভাড়া থাকতেন। খুলনা শহরে পাটকলের শ্রমিক ছিলেন কুদ্দুস। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রহিমার ছেলে মিরাজ একবার কুদ্দুসের বোয়ালমারীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রহিমাদের সঙ্গে কুদ্দুসের তেমন সম্পর্ক ছিল না।
কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তিনজনকে আটকের কথা জানিয়ে কেএমপির কর্মকর্তা মোল্লা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওই বাড়ি থেকে আমরা তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে এসেছি। তারা হলেন কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী, ছেলে ও তার (কুদ্দুস) ভাইয়ের স্ত্রী। এই তিনজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, গত ১৭ আগস্ট ওই বাড়িতে রহিমা বেগম গিয়েছিলেন। প্রথমে তারা রহিমাকে চিনতে পারেনি। পরে একপর্যায়ে তাকে চিনতে পারে। তখন তাকে সাবেক বাড়িওয়ালা হিসেবে বেশ সেবাযত্ন করেন (কুদ্দুস ও তার বাড়ির লোকজন)। পরবর্তী সময়ে তাদের কাছে (রহিমা) জানান, এর আগে তিনি গোপালগঞ্জের মকছেদপুর ও চট্টগ্রামে ছিলেন।’
বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার ভাগিনা জয়নাল জানান, আমার মামা খুলনা শহরের মীরেরডাঙ্গা সোনালী জুটমিলে চাকরির সুবাদে খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আমি ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি জানতে পারি। তারপর ওই ছবিটি রহিমা বেগমকে দেখিয়ে বলি যে, এটা আপনার ছবি কিনা; ওই সময় রহিমা বেগম হতভম্ব হয়ে বলেন, আমার ছবির মতোই তো লাগতেছে। তার মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজের স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করেন। রহিমা বেগমের বিষয়টি তাদেরকে বললে তারা ওই নম্বরের আর ফোন দিতে নিষেধ করে। তারপর থেকে আমার সন্দেহ হলে রহিমা বেগমকে না জানিয়ে তার (রহিমা) বিষয়টি শনিবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানাই। তিনি খুলনা মহানগরের ২ নম্বরের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমই ওই নারী।