নিউজ ডেস্ক
মানুষের পুরো জীবনটাই মহান আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতসমূহে পূর্ণ। এসব নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হচ্ছে সুসন্তান। আজ যারা শিশু, কাল তারা হবে বড়, ভবিষ্যতে সমাজ-রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল। একটি সভ্য-সুন্দর সমাজ নির্মাণের জন্য প্রয়োজন, প্রত্যেক শিশুকে দ্বীনদার আদর্শবানরূপে গড়ে তোলা। এ শিশু-কিশোরেরা যদি অবহেলা-অনাদারে বড় হয়, নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবারের জন্য এরাই হবে চরম অশান্তি ও বিপর্যয়ের কারণ। আর শিশুদের দ্বীনদার আদর্শবানরূপে তখনই গড়ে তোলা যাবে, যখন তাদের অধিকারগুলো সঠিকভাবে পাবে। পুলিশের এক তথ্য অনুযায়ী, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত। ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়েশিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মেয়ে পথশিশুরা যৌনকর্মেও জড়িয়ে পড়ছে।
এ ছাড়া ৪১ শতাংশ পথশিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারে না। ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কোনো স্থানে সর্বোচ্চ ছয় মাস অবস্থান করে। তাদের মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে স্থান পরিবর্তন করে। আর নিরাপত্তাকর্মীদের কারণে স্থান ত্যাগ করে ৩৩ শতাংশ শিশু। খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোর পরও তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিশুকে মাসিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নৈশপ্রহরী ও মাস্তানদের দিতে হয়।
পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। ঢাকার অন্তত ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯-১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। তা ছাড়া মিছিল-মিটিং, বিভিন্ন রাজনৈতিক শোডাউন কিংবা হরতালের পিকেটিংয়ে পথশিশুদের ব্যবহার করা হয়। শোডাউন ছাড়াও পিকেটিং, ভাঙচুর কিংবা ককটেল নিক্ষেপের মতো বিপজ্জনক কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই শিশুরা।
পথশিশুদের দুর্দশা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার ব্যবস্থা না করলে এই শিশুদের জীবন খুব ভয়ানক হবে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত এই প্রতিপাদ্যই শিশুদের একমাত্র স্লোগান হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত হয়ে আসছে।
একজন শিশু জন্মের পর থেকেই তাদের কিছু মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রের কাছে পেয়ে থাকে। কিন্তু তাদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হচ্ছে অনেক রাষ্ট্র। শিশুদের অধিকার শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবেই নয় তাদের অধিকার সম্বন্ধে ইসলামেও বলা হয়েছে। ইসলাম মানুষের জীবনের প্রতিটি ধাপেই তার অধিকার সংরক্ষণ করে, তাকে সম্মানিত করেছে। কোরআনে উল্লেখ হয়েছে, “আমিতো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর ওদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” [সূরা বনি ইসরাইল ৭০]।
আজকের শিশুদের যেভাবে গড়ে তোলা হবে সেভাবেই তারা গড়ে উঠবে,তাই আগামী বিশ্ব ও বিশ্বের নেতৃত্বের সঠিক পরিচালনা করার জন্য শিশুদের কে অবশ্যই সঠিকভাবে গড়ে উঠার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তার পাশাপাশি এই পথশিশুদের অবশ্যই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে দেশে পথশিশুদের সঠিক সংখ্যাই নির্ধারণ করা হয়নি। আবার পথশিশুদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সর্বশেষ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী দেশে পথ শিশুর সংখ্যা ৬ লক্ষ ৭৯ ঊনআশি হাজারের কিছু বেশি। এরপর আনুষ্ঠানিক কোন জরিপ হয় নি। একাধিক বেসরকারি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা হবে ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ। এর মধ্যে শুধু ঢাকা রাজধানীতেই আছে প্রায় ৬ থেকে সাত লাখ পথ শিশু। এভাবেই দিনদিন পথ শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
এ ছাড়াও দেশে ব্যাপক হারে নারী,শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনাও কম নয়।
রাজশাহীর জাতীয় দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী গত আগস্ট মাসেই ২৭ জন নারী ও শিশু বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। নির্যাতনের পরিস্থিতি বিভিন্ন মাত্রায় অবনতি ঘটেই চলছে। যৌতুক, বাল্য বিবাহ, পরকীয়ার কারণে এই নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে চলছে। এছাড়া পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক, প্রেমঘটিত ঘটনার কারণেও নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে নারীরা। বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী
করোনা মহামারিজনিত পরিস্থিতিতে দেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা আরও বেড়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে শিশুর প্রতি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ১৯৯টি। এ সাত মাসে খুন হয়েছে ৩৬৫ শিশু। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, করোনার সময় শিশু ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ও এর ভয়াবহতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০২০ সালে একই সময়ে শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ছিল ৯৮৬টি। ২০১৯ সালে বছরজুড়ে ঘটেছিল দুই হাজার ১৮৪টি শিশু নির্যাতনের ঘটনা। আগের বছর যা ছিল এক হাজার ৫৩২টি। করোনা মহামারি সামাজিক অস্থিরতা ও শিশু নির্যাতনের প্রবণতা বাড়িয়েছে। এমতাবস্থায় শিশুদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিহার্য।
পিরোজপুর সংবাদদাতা
Leave a Reply