নিউজ ডেস্ক :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে শনিবার (১ অক্টোবর)। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এ দুর্গোৎসব শুরু হবে।
বুধবার (৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের এ মহোৎসব।
ইতোমধ্যে এ মহোৎসবকে আনন্দমুখর করতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে উৎসবের আমেজ বইছে, ঢাক-ঢোল কাঁসা ও শঙ্খের আওয়াজে বিভিন্ন মন্দির মুখরিত হয়ে উঠেছে।
রামকৃষ্ণ মিশনের সূচিতে বলা হয়েছে, শনিবার (১ অক্টোবর) সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে সায়াংকালে কল্পারম্ভ ও বোধন আমন্ত্রণসহ অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চণ্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সব মণ্ডপ এলাকা।
রোববার (২ অক্টোবর) উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০মিনিটে।
সোমবার (৩ অক্টোবর) মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ও বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে সোমবার বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটে ও সমাপন বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায়। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা-আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সব আয়োজন।
এদিকে ধূপ-সিঁদুরের ঘ্রাণ আর কাঁসা- শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত এখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারিবাজার। চলছে পূজার শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। আলতা, চুড়ি, টিপ কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।
উৎসবের আমেজ শাঁখারিবাজারে বেশ কয়েক দিন আগেই লেগেছে। আজ থেকে ভিড় আরও বাড়বে। আগামী কয়েক দিনের বাড়তি চাপ সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন দোকানদাররা। শাড়ি, মুকুট, অলংকার, চন্দন, প্রদীপ, ফুল, সিঁদুর, আলতা, কুমকুম, টিপ, শাঁখা, পলা, আবির, রঙিন কাগজের পাশাপাশি অর্ঘ্য দেওয়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রী মিলছে শাঁখারিবাজারের বিভিন্ন দোকানে। সাদা পলা আর গোল লাল টিপ চলছে বেশি।
এ বছর সারাদেশের ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে। গত বছর সারাদেশের পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ছয়টি বেশি।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বেচ্ছাসেবক দল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত এ মন্দিরের মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র ও মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিজয়া শোভাযাত্রা করা হবে।
এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরও সুসংহত হোক- এ কামনা করে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি।