সবুজ হাসান
সহকারী শিক্ষক
গজালিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কচুয়া, বাগেরহাট।
শিক্ষক সমাজ জাতির বিবেক। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে ৯৭ শতাংশ অবদান তাঁরা রাখছেন। আজ সেই বিবেক ক্ষত-বিক্ষত। বিবেক যদি ক্ষত-বিক্ষত হয় তাহলে জাতির জন্যে কী অবশিষ্ট থাকল?
বিচ্ছিন্নভাবে জাতীয়করণ একটি বিষ্ময়। খোঁড়া উৎসব ভাতা নিয়ে কেউ ভাবে না। শিক্ষক সমাজ যে রাষ্ট্রের একটি অবহেলিত শ্রেণি তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ এটি। যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা নিগৃহীত হচ্ছে বেশি। কোথাও কানধরে ওঠ বস করানো হচ্ছে, কোথাও লাঞ্চিত করা হচ্ছে, আবার কোথাও পিপার স্প্রে করা হচ্ছে আবার কোথাও ধাওয়া করা হচ্ছে। আমরা শিক্ষক সমাজ যখন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেই তখন শিক্ষার্থীরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনে। আজ শিক্ষকের উপর বর্বোরচিত হামলাও দেখে শিক্ষার্থীরা বুঝছে সমাজের সেই সম্মানিত ব্যক্তির অবস্থান। আবার মূল্যায়নটাও হচ্ছে সেভাবে।
একজন অবসরপ্রাপ্ত বা মৃত শিক্ষক, তিনি কি রেখে গেলেন যা দিয়ে তার সংসারটি সুন্দর করে পরিচালনা করতে পারবেন। সারা জীবন যিনি জ্ঞানের আলো ছড়ালেন তার পরিবারের ভবিষৎ কী? যিনি সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়াতে নিরলস পরিশ্রম করে গেলেন তিনি এত বড়ো সরকারি কর্মকর্তা তৈরি করছেন তার জীবনে তিনি কী পাচ্ছেন? তার পরিবার কী পাচ্ছে ভেবে দেখেছেন কেউ? পাচ্ছে লাঞ্ছনা গঞ্জনা আর অবহেলা শেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু। আর মৃত্যুর পর তার পরিবার হচ্ছে অবহেলিত।
আমরা চেয়েছিলাম সমগ্র বে-সরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা একত্রে জাতীয়করণ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত দুর্বল অর্থনীতিগ্রস্ত দেশে এক সাথে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়েকে জাতীয় করণ করে দেশে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত মজবুত করেছিলেন। মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকেও জাতীয়করণ করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু ৭৫ এর ঘটনার পর ক্ষমতার পালা বদলে যেটা সম্ভব হয়নি। আমরা আশান্বিত হই তখনই যখন দেখি জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যাও জাতিরজনকের পথ ধরে হাঁটছেন। তিনি ২২ হাজার রেজিষ্ট্রার প্রাথমিককে জাতীয়করণ করে নজির স্থাপন করেছেন। জাতিরজনকের পর এত বড়ো ধরনের জাতীয়করণ বাংলার ইতিহাসে প্রথম।
আমরা যারা বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষকতা করি তারা সবাই চাই প্রতিষ্ঠানের আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হউক। প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হউক। প্রভাশালীদের চাপে কি প্রধান শিক্ষক কি সহকারি শিক্ষক সবার শ্রেণি পাঠদান কাঙ্খিত রূপলাভ করে না।
বেসরকারি শিক্ষক সমাজ ২০১৬ জুলাই হতে বাড়ি ভাড়া ১ হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা ৫’শ টাকা পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করলে জাতীয়করণ করার জন্য আয় বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ট্রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ সম্পদ নিয়ে গড়ে উঠেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের আছে নিজস্ব জমি পুকুর, লেক, আয় বর্ধক মৎস্য খামার, আছে মার্কেট, আছে ফল ফলাদির বাগান, আছে দোকান, আছে নিজস্ব মার্কেট, আছে নিজস্ব রিজার্ভ ফান্ড ও সাধারণ তহবিল। এ সমস্ত সম্পদ থেকে অর্জিত আয় থেকে সকল বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ সম্ভব। জাতীয়করণ এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আমাদের অর্জন কম নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের অবস্থান খুব উজ্জল। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয়প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের “চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ” সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। “ হ্যাপি প্লানেট ইনডেক্স ২০১৬”এর পরিবেশ বান্ধব ও সুখী দেশের তালিকায় ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে গত ২৫ বছরে বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। এশিয়ায় নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ প্রথম। খুব তাড়াতাড়ি আমরা MDG ও SDG অর্জন করতে যাচ্ছি।
আজ যারা দেশের উচ্চ পর্যায়ে নীতি নির্ধারণী কাজে রত তারাও এই কারিগর হতে হাতে খড়ি নিয়েছেন। তারাও কি তাদের এই কারিগর নিয়ে ভাবছেন। বেসরকারী শিক্ষক সমাজ যখন দাবি করে তখন শুধু অর্থ সংকটের কথা তুলে ধরা হয়। কিন্তু সরকারের এমন অনেক প্রকল্প আছে যেখানে অযথা অর্থ ব্যয় হয় কিন্তু আউটপুট কিছু আসে না। কিন্তু শিক্ষক সমাজ সদা ব্যাপৃত দেশ সেবায়। শিক্ষার্থী গড়ার কাজে। শ্রেণি পাঠদান ছাড়া সরকারের তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তা অবশ্য প্রশংসার দাবিদার। বেসরকারি শিক্ষকদের পেশায় যারা নিযুক্ত তারা সরকারের বিধি বিধান মেনে এ পেশায় এসেছে। শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সরকারে অপচয় হবে না বরং দেশ উপকৃত হবে কারণ দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা ব্যবস্থা বেসরকারিভাবে পরিচালিত। গণতন্ত্রের মানসকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের বহুদিনের জাতীয়করণের লালিত এ দাবি পূরণ করে ইতিহাসে চিরভাস্মর হয়ে থাকবেন এ প্রত্যাশা শিক্ষক সমাজের।
আজ যে সব শিক্ষক বন্ধুরা রাজপথে আছেন, তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। অসুস্থতার দরুণ মাঝপথে গিয়ে ফেরত আসছি। তবুও আপনাদের সাথে সার্বক্ষণিক সরব উপস্থিত আছি। জয় হোক শিক্ষকদের।