রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাট জেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজার গুলোয় কোনরকম পরিক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অবাধে জবাই করা হচ্ছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গরু-ছাগল। সেই আক্রান্ত গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।
জানা যায়, সাম্প্রতি সময়ে দেশের প্রায় জেলা গুলোতে গরুর ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাস জনিত রোগের কারনে অনেক সময় গরু কেনা বেচা বন্ধ হয়ে যায়। ল্যাম্পি স্কিন মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএস-ডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে যে সময়ে মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার সেই সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
১৯২৯ সালে জাম্বিয়ায় প্রথম অফিসিয়ালি শনাক্ত হওয়া এই রোগ ১৯৪৩ সাল থেকে ৪৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। ল্যাম্পি স্কিন আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া বিপদজনক। অধিক সিদ্ধ করে খেতে হয় তা না হলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে যে সব গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয় তার অধিকাংশ গরু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। কেননা গরু-ছাগল জবাইয়ের পূর্বে পরিক্ষা করে দেখার কথা থাকলেও তা করছেনা জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্তা বাবুরা। জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্তা বাবুরা গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজার তো দূরের কথা পৌর শহরে যে সব জায়গায় গরু-ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়-সাপটানা, বাহাদুর মোড়, আলোরুপা মোড়, হাড়ীভাঙা, নয়ারহাট, গোশালা বাজার, ডাইলপট্টি, সেনামত্রী মার্কেট, ও পাশ্ববর্তী মহেন্দ্রনগর এবং সাপ্টিবাড়ী সেখানেই যেতে নারাজ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কশাইরা ভালো’র সাথে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করছে মাংস, এমন কি ৩/৭ দিন ফ্রিজ জাত করেও তা বিক্রি করছে।
গরু জবাই করার নির্ধারিত কশাইখানা থাকলেও সেখানে হয়না গরু-ছাগল জবাই, কশাইরা তাদের বসত-বাড়িতে গরু-ছাগল জবাই করে মাংস দোকানে এনে বিক্রি করে। এভাবে চলছে দিনের পর দিন, দেখার কেউ নেই।
সদরের আলোরুপা মোড় সংলগ্ন চায়ের দোকানী মজিবর মিয়া বলেন, শহরের মিডিল পয়েন্ট আলোরুপা মোড়, এখানে অনেক দিন যাবত মাংস বিক্রি হয়। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে মাংস কিনে অথচ আজবধি কোন প্রাণী সম্পদ অফিসের লোককে দেখলাম না মাংস পরিক্ষা করার জন্য এসেছে। তারা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নিয়ে আরাম-আয়সে থাকবে আর আমরা ভেজাল মাংস খেয়ে দিন-দিন অসুস্থ হবো। তিনি আরও বলেন, আমি এ ব্যাপারে গত ২৮/০৯/২২ ইং তারিখে পৌরসভার মেয়র জানাব রেজাউল করিম স্বপনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, তিনি আমাকে আস্বস্ত করেছেন বিষটা দেখবেন বলে কিন্তু আজ পর্যন্ত সামাধান পাইনি।
ওই এলাকার সচেতন মহল ও কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধা বলেন, আমাদের চোখের সামনে কখনো গরু-ছাগল জবাই করেনা কশাইরা। বাড়িতে জবাই করে মাংস এনে বিক্রি করে, আমরা সেগুলো কিনে খাই। সত্যি কথা বলতে কি? আমরা কি খেলাম? জবাই করা গরুটা সুস্থ না কি অসুস্থ? এটা আমাদের প্রত্যকের জানা উচিত। তাই আমরা চাই সরকারি লোকজন এসে গরু জবাইয়ের পূর্বে পরিক্ষা করে যাবে এবং সরকারি নির্ধারীত জায়গায় গরু-ছাগল জবাই হবে।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং স্হানীয় কশাইদের নিয়ে মিটিংও করেছি অল্প সময়ের মধ্যে আলোরুপা মোড় থেকে নির্ধারীত জায়গায় তাদেরকে অপসারণ করা হবে। মাংস পরিক্ষা করার কথা বললে তিনি আরও বলেন, সেটা পৌরসভার কাজ নয়, সেটা প্রাণী সম্পদ অফিসের কাজ।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগে আমরা মিটিংও করেছি, পৌরসভার সেনেটারি অফিসার এটি দেখ ভাল করবে। তাছাড়াও মাঝে মাঝে আমি নিজেও যাই। মুলতঃ জনবল সংকট থাকার কারণে সঠিক ভাবে মনিটরিং হচ্ছে না।
Leave a Reply