সাহিদ বাদশা বাবু , লালমনিরহাট ::
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর-বাউরা ও জুম্মাপার সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা বসেছে। সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে দুই বাংলার মানুষ তাদের স্বজন দের একটু দেখতে,কথা বলাতেই দুর দুরান্তে থেকে ছুটে এসে মিলিত হচ্ছেন কাঁটাতারের বেড়ার কাছে।
ভারত-বাংলাদেশের মিলনমেলায় শেষবারের মতো লাঠি ভর করে মেয়েকে দেখা করতে এসেছেন বৃদ্ধ হরিমন (৭০) ও মা সুমতি রানী। মেয়ে ফুলমতি(৩৫) ভারতের জামালদহ রানী নগর এলাকায় থাকেন। বিশ বছর পুর্বে বিয়ে হয় ভারতের কুচবিহার জেলার জামালদা রানি নগর এলাকায় বসবাস করছেন।পাঁচ বছর পর বাবা- মায়ের দেখা পেয়ে ফুলমতি আবেগ আপ্লুত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে কাঁদতে থাকেন।
বাবা মা মেয়ে দেখা হয়েছে কিন্তু মেয়েকে ছুঁয়ে দেখতে পারেননি বৃদ্ধ হরিমন। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর ) দুপুরে দেশের হিন্দু ধর্মালম্বী ছাড়াও মুসলিম সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ কাঁটা তারের কাছে সমবেত সয়েছেন, দুই বাংলার আত্মীয়-স্বজন একে অপরকে একনজর দেখবেন এই আশায় ভীড় জমান। সরেজমিদে দেখা গেছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বিজিবির শীথিলতার কারণে, সীমান্তের সানিয়াজান নদীর হাটু জল চা বাগান পেড়িয়ে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে দুই বাংলার মিলনমেলা বসে।
স্বজনদের দেখে আবেগ আপ্লুত, মেয়ে বাবাকে দেখে, বাবা মেয়েকে দেখে কান্না ধরে রাখতে পারেনি ,তাই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারন হয়। দুই বাংলার মানুষের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। কেউ বা নিজের আত্মীয় স্বজনের জন্য খাবার তৈরি করে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এনে খেতে দেখা গেছে। জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার জুম্মার পার নবীনগর-বাউরা সীমান্তের মেইন পিলার ৮৪০ এর সাব পিলার কাছে ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের নিকট সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মানুষের মধ্যে মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে থেকে আসা শিশু কিশোরসহ অন্যনদের মধ্যে (প্রসাদ) খাবার পরিবেশন করা হয়।
দুই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন তাদের আপনজনদের দেখে আবেগ আপ্লত হন ও কুশল বিনিময় ও উভয়ে খাবার,ফল বিনিময় করেন। হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বালিশের গ্রামের কল্পনা রানী বলেন, তিন বছর পর নিজের বোনের সাথে দেখা করলাম এই কাঁটাতারের বেড়ার কাছে।অনেক ভালো লাগছে প্রতিবছর যেন এভাবে সুযোগ করে দেয় আমাদের দেখা করার জন্য।
এ বিষয়ে বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম মিলন জানান,প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কালীপূজায় সীমান্তে মিলন মেলা বসেছে। এতে দুই বাংলার মানুষের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় থাকবে। অনেকেই পাসপোর্ট ভিসা করতে না পেরে প্রতিবছর আশায় থাকে কালী পূজার মিলন মেলার জন্য।