পাবনা প্রতিনিধি :
দুধের শিশুকে নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন পাবনার সুজানগর উপজেলার রাজিয়া সুলতানা। তিনি মানবিক বিভাগ থেকে উপজেলার নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজকেন্দ্র অংশ নিয়েছেন।
রোববার (৬ নভেম্বর) শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথমদিন ছিল বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা। এদিন সুজানগর পৌর সদরের নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসেন রাজিয়া সুলতানা। এ সময় তার কোলে ছিল ৩২ দিনের দুগ্ধ শিশু। তিনি শিশুকে কোলে নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নেন। রাজিয়া সুজানগর মহিলা ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলামের। তিনি তাৎক্ষনিক মানবিক দিক বিবেচনায় কলেজ অধ্যক্ষকে বলে শিশু সন্তানকে আলাদা কক্ষে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করে দেন। যাতে শিশু সন্তানকে ফিডিং করিয়ে রাজিয়া ঠিকমতো পরীক্ষা দিতে পারেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রোস্তম আলী হেলালী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন।
পরীক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবার পর ভয় ভয় করছিল। কি জানি কি হয়। বাচ্চাটিও কাঁদছিল। কিভাবে পরীক্ষা দেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না সন্তানের চিন্তায়। তবে ইউএনও স্যারসহ সবাই আমাকে সাহস দিয়েছেন। আমার পাশে দাঁড়িয়ে বাচ্চার ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।
নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব আলমগীর হোসেন বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে কলেজের আলাদা একটি কক্ষে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজিয়া যাতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে, সেজন্য পরীক্ষার শেষদিন পর্যন্ত তাকে আমরা এ সুযোগ করে দিবো।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, সকাল ১১টায় পরীক্ষা ছিল। সাড়ে ১১টায় ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখতে পাই একজন পরীক্ষার্থী বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন তিনি জানান বাচ্চার মা পরীক্ষা দিচ্ছে। ওই সময় শিশুটি কাঁদছিল। আমি মহিলাকে ডেকে নিয়ে কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষা হলের পাশের রুমে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করে দেই। যতবার বাচ্চার প্রয়োজন ততবার তার মা যেন তাকে দুধ পান করাতে পারেন।
ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি চোখে পড়ার পর নিজের কাছে খুব চমৎকার লেগেছে। একটা মেয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে তার বিয়ে হয়েছে। বছর ঘুরে কোলে সন্তানও এসেছে। এই অবস্থায় সচরাচর কেউ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু রাজিয়া পেরেছে। তার ইচ্ছা ও মনোবল দেখে খুশি হয়েছি। আশা করছি রাজিয়া শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারবে এবং ভাল ফলাফল বয়ে আনবে।